কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের শিষ্য প্রতারক সাহাদৎ হোসেন মামুন

জীবন বাঁচাতে রোগীরা খড়কুটোকেও শক্ত অবলম্বন ভাবেন। একটু ভালো চিকিৎসার প্রলোভনে অনেকেই তাই দালালের খপ্পরে পড়েন। সহজ-সরল অসহায় মানুষের এ দুর্বলতাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে দালালচক্র। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের নানা ছলাকলায় বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়াই তাদের কাজ। দিন যত যাচ্ছে এসব প্রতারকের সংখ্যা ততই বাড়ছে। ফলে ‘প্রতিযোগিতার মাঠে’ এগিয়ে থাকতে দালালদের নানা লোভনীয় অফার দিচ্ছেন চক্রের মূলহোতারা। 

এরই ধারাবাহিকতায় রোগী ভাগিয়ে আনতে দালালদের ঈদ উপলক্ষে কোরবানির গরু উপহার দিচ্ছেন প্রতারক চক্রের এক মূলহোতা। নাম তার সাহাদৎ হোসেন মামুন। মানুষের জীবন নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করা এই প্রতারক এক সময়ের কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের শিষ্য। 

আজ বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) খন্দকার সাইফুল আলম। 

আটক পাঁচ প্রতারক

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগে করে রোগী ভাগিয়ে আনা হতো রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালে। এ কাজে অ্যাম্বুলেন্সচালক ও হাসপাতালের দালালরা পেতেন নির্দিষ্ট কমিশন। তারা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে শ্যামলীর ওই হাসপাতালে ভর্তি করলেই শুরু হতো প্রতারণার প্রথম অঙ্ক। অপ্রয়োজনীয় টেস্টসহ নানা খাতে রোগীদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অংকের টাকা। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৪ প্রতারককে আটক করে র‍্যাব-২ এর একটি দল। 

পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। এ সময় মূলহোতা সাহাদতের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ৩ লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা ও ৫৫০ পিস ইয়াবা। তিনি বাদে আটক অন্য প্রতারকরা হলেন- শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের স্টাফ মহিন উদ্দিন মামুন (৩৬), রহমত উল্লাহ্ (৩২) ও আকরাম হোসেন (৫২)। 

র‍্যাব-২ এর সিও খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, মহামারি করোনাকালেও দালালচক্র রাজধানীর কিছু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে ভর্তি করছেন। মোটা অংকের কমিশন পেয়ে রোগীদের হেনস্থা করছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও রোগী রোগীদের হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে রোগী পরিবহনে উচ্চ ভাড়া দিতে বাধ্য করেন। 

এমন পরিস্থিতিতে র‍্যাব-২ এর ছায়া তদন্তে দালালচক্রের হোতা সাহাদৎ হোসেন ওরফে মামুনের নাম উঠে আসে বলে জানান সিও সাইফুল। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে জানা যায়- উন্নত চিকিৎসার নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালরা রোগী এনে আইসিইউ’তে ভর্তি করে। পরে বিভিন্ন চেকআপের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

চক্রটির কৌশল সম্পর্কে র‍্যাব-২ এর সিও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে চক্রটির। নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে তারা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠায়। জেলা শহরের অ্যাম্বুলেন্সচালক এবং হাসপাতালের দালালরা এ চক্রে কাজ করে মোটা অংকের কমিশন নেয়। 

দালালদের জন্য সাহাদতের নানা অফার

দালাল ও অ্যাম্বুলেন্সচালকদের আকর্ষণীয় কমিশন দিতেন সাহাদৎ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা রোগী ভাগিয়ে আনতেন। কমিশনের বাইরে উৎসবে-পার্বণে দিতেন বিশেষ অফার। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ দালাল ও অ্যাম্বুলেন্সচালককে কোরবানির গরু উপহার দেন তিনি। 

প্রতারণার ফাঁদে ২৭ বিয়ে 

সাহাদতের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, সাহাদৎ হোসেন মামুন প্রতারণার উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত ২৭টি বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর মূলত যৌতুক ও টাকা আদায় করে তাদের জিম্মি করা হতো। তাদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। প্রতারণার শিকারদের মধ্যে অধিকাংশই হাসপাতালের নার্সিং পেশার সঙ্গে জড়িত নারী। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয়দেরও তিনি প্রলোভনে ফেলে বিয়ে করেছেন। 

এরশাদ শিকদারের সহযোগী সাহাদৎ

প্রতারক সাহাদৎ হোসেন মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি এরশাদ শিকদারের সহযোগী ছিলেন। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর মামুন পেশা বদলে ফেলেন। ঢাকায় এসে হাসপাতাল চক্রের দালালিতে শক্ত অবস্থান গড়েন। এছাড়া মাদক ও জাল টাকার ব্যবসাও করছিলেন। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলা রয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) খন্দকার সাইফুল আলম। 

জেইউ/এইচকে