ঘড়িতে দুপুর ২টা বেজে ১১ মিনিট। রাজধানীর মহাখালী হয়ে গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরে যাবার পুরো পথটি রুদ্ধ হয়ে আছে। মহাখালী উড়াল সেতুর নিচ থেকে গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরে পৌঁছাতেই চলে গেল ৪০ মিনিট। গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরের প্রায় এক কিলোমিটার আগে থেকেই গাড়ির জটে এঁকেবেঁকে গেছে। মোটর সাইকেল চালকরাও সামনে এগোতে পারছেন না। বৈশাখী পরিবহনের বাস থেকে নেমে যাত্রীরা একে একে বের হয়ে পড়েন কড়া রোদ মাথায় নিয়েই। 

যাত্রীদের একজন শরীফুল আলম পলাশ বললেন, আইজ হাঁটা ছাড়া উপায় নাই। গুলশান-১ থেকে দুই নম্বর গোল চত্বরে আসার পথে ৫০০ মিটার আগে থেকেই মোটর সাইকেলে পথ আটকে থেকে থেকে এগোনো এই প্রতিবেদককে আটকে পড়তে হলো। সারি সারি ব্যক্তিগত গাড়ির জটে ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরা চাপ সামলাতে পারছিলেন না। গুলশানের বড় দুটো মোড়ের প্রতিটিতে আটটি লেনে গাড়ি চলাচল সামাল দিতে গিয়ে তাদের গলদঘর্ম হতে দেখা গেছে। গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরে গরুবাহী ট্রাকও জটে আটকে ছিল।

রাজধানীর গুলশানের দুই মোড়ে সিগন্যাল বাতি কাজ করে। প্রতিটি মোড়ে আটটি লেনের গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকেই যানজটের ধকল পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। চালক ও ট্র্যাফিক পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে, শুধু গুলশানের এই দুটো মোড় নয়, রাজধানীর কমপক্ষে ৭৩টি মোড়েই গাড়ির চাপে তীব্র যানজট ছিল। দুই সপ্তাহ পর শিথিল করা বিধি নিষেধের প্রথম দিনে দেখা গেছে গতিহীন ঢাকার আগের চিত্র। অথচ বিধি নিষেধকালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিনে রাজধানীজুড়ে যানজটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ ছিল কোরবানির পশুবাহী ট্রাক চলাচল, অতিরিক্ত গাড়ি রাস্তায় নামা ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা।

বুয়েটের অধ্যাপক ড সামছুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা মুমূর্ষু অবস্থায় থাকে। সর্বাত্মক লকডাউন থাকায় গণপরিবহন চলাচল করেনি। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল। তবে ঢাকার সড়কে গতি ছিল। কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিলের পর ঢাকা যেন হাঁটছে। আগে ঢাকায় বাস চলাচলের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সর্বশেষ হিসাবে তা নেমে এসেছে পাঁচ কিলোমিটারে। এখন হঠাৎ করে বিধিনিষেধ শিথিলের পর গাড়ির চাপ ও একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ঢাকার রাস্তায় গতি আরও কমে গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিজয় সরনি, নিউ মার্কেট, মিরপুর, পল্টন, সায়েদাবাদ, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, কাওরান বাজার, শাহবাগ, বংশালসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট ছিল।

দুপুরে রামপুরা থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত গাড়ির জটের মধ্যে পড়ে হাঁসফাঁস করছিলেন মোটর সাইকেল চালক সাব্বির হোসেন। বললেন, তীব্র রোদের মধ্যে একেকটি মোড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট দাঁড়াতে হচ্ছে। গাড়ি যেন চলেই না।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে আগারগাঁও অংশ স্থানে স্থানে বন্ধ করে রাখা ছিল। বিধি নিষেধ থাকায় এই সড়কের সংযোগ পথগুলোয় প্রতিবন্ধক রেখে চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকে এসব প্রতিবন্ধক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে মিরপুর থেকে বিভিন্ন প্রান্তে বাস চলাচল করতে পারছে। তবে বাস ও প্রাইভেট কার বেড়ে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলার কারণে এ চলাচল বিঘ্নিত হতে দেখা গেছে। বাস চালকরা বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছেমতো যাত্রীদের তুলছিলেন। ফলে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, উড়োজাহাজ মোড়, খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ির গতি ছিল ধীর।

সকালে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে বিআরটিসির বাসে উঠে উড়োজাহাজ মোড় অতিক্রম করতেই আল আমীনের দেড় ঘণ্টা লেগেছে। তিনি জানান, যেখানে চালকরা যাত্রী পাচ্ছেন সেখানেই বাস থামিয়ে তাদের তুলেছে। শেওড়াপাড়ার একাধিক স্থানে বিহঙ্গ পরিবহন বার বার বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। ওই বাসের চালকের সহকারী আবদুর রহমান বলেন, বাস দাঁড়লেই যাত্রীরা উঠছে। যাত্রী পেলে তাদের ওঠাতে হবেই।

ঢাকা মহানগরের ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরা গাড়ির চাপের বিষয়টিকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রঞ্জন দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন কঠোর লকডাউনের পর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি ও কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশুবাহী ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করছে। ফলে গত কয়েক দিনের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। বলতে গেলে স্বাভাবিকভাবে ফিরেছে রাজধানী। এ কারণে কিছু এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পিএসডি/এমএসি/এসএম