‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাচ্ছে কেউ যাতে আমাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হোন। আমাদের সবারই উচিত পদক্ষেপগুলোকে সাধুবাদ জানানো।’ সোমবার (১৯ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল এসব কথা বলেন।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে রাসেল বলেন, ‘কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের বর্তমান নীতিমালা মেনে বিজনেস করতে দিতে হবে। নীতিমালার আলোকে গ্রাহকদের টাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে যেসব গণমাধ্যম লিকুইডিশনের হেড লাইন করে, সেটির পরিষ্কার বিবৃতি না আসলে মন্ত্রণালয়ের সঠিক উদ্দেশ্য সফল হবে না।’

‘আবার এই সকল গণমাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যার (যদি হয়ে থাকে) জন্য আমাদের বর্তমান বিজনেস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস, গেটওয়ে, আমাদের সম্মানিত ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আমাদের এতদিনের কার্যক্রম সবই ছিল একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স দাঁড় করানো, যা থেকে আমরা যেন বলতে পারি দেশের একটি কোম্পানি এই সময়ে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক জায়গায় বিদেশি বড় কোম্পানিকে পিছনে ফেলে লিড দিচ্ছে। আজ ইকমার্স, ফুড ডেলিভারি, টিকেটিং, স্বাস্থ্যসহ সকল সেক্টরের লিডিংয়ে যাচ্ছে ইভ্যালি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আমরা শুধু সবার কাছে কিছুটা সময় চাই। নতুন নীতিমালায় আপনাদের টাকা আমাদের হাতে আশার কোনো সুযোগ নাই, যদি আপনারা পণ্য না পান। আমরা কিছুটা সময় পেলে সকল পূর্বে অর্ডার অবশ্যই ডেলিভারি করতে পারব।’

‘এই অবস্থায় আমাদের ব্যবসায়িক পরিবেশ ঠিক থাকা অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করি মন্ত্রণালয়ে এবং বাংলাদেশে ব্যাংক আমাদের এই ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। বিস্তারিত আমি লাইভে বলব ইনশাল্লাহ। সাথে থাকুন।’

গত রোববার সচিবালয়ে ই-কমার্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ডাকা হবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভ্যালিকে ডাকা হবে, কারণ দর্শানো হবে, বিজনেস প্ল্যান দিতে বলা হবে।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে গত ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা।

এতে আরও বলা হয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

এসএইচআর/এমএইচএস