অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের দৃশ্য একটু ভিন্ন। বুধবার (২১ জুলাই) কোরবানি শুরুর পর থেকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। আজও (বৃহস্পতিবার) তারা বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ করা যায়। যেখানেই কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকার খবর মিলছে সেখানেই ছুটে আসছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তাদের এমন তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

যদিও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ‘রাত ১২টার মধ্যে সব এলাকার শতভাগ পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন। তবে, সরেজমিন রাজধানীর ১৩নং ওয়ার্ড এলাকার মনিপুর, পূর্ব মনিপুর, মোল্লাপাড়া, আমতলা, ৬০ ফিট সংলগ্ন পাকা মসজিদ, ছাপড়া মসজিদ, মাইকের দোকানের গলি, মধ্য পিরের বাগ, নির্বাচন কমিশন এলাকা, আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্জ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

কোরবানি পশুর বর্জ্য ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী 

দুপুর ১২টার পর পিরের বাগ ৬০ ফিট পাকা মসজিদ এলাকায় ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান থেকে বর্জ্য নিয়ে ভ্যানগাড়িতে উঠাতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মীর সঙ্গে। বলেন, গতকালই সব বর্জ্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ সকালেও কিছু স্থান থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। অনেকে আবার আজ কোরবানি দিয়েছেন। সেগুলোর বর্জ্য ভ্যানগাড়িতে করে ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হচ্ছে।

আমতলা এলাকায় দায়িত্বরত পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেজাউল বলেন, হাটে ও বস্তিতে বর্জ্য পড়ে থাকার খবর পেয়ে এসেছি। গন্ধ বের হচ্ছিল। দ্রুত সেগুলো ভ্যানগাড়িতে তুলে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিয়েছে। 

পূর্ব মনিপুরের বাসিন্দা আজগার আলী বলেন, এবার সার্বিক চিত্র ছিল ভিন্ন। কমিশনার নিজে এসেই বর্জ্য অপসারণের কাজ তদারকি করেছেন। যে কারণে যথা সময়ে কাজ শেষ হয়েছে।

মাইকের গলির চা-বিক্রেতা মিনহাজ বলেন, গত বছর রাতের আঁধারে এক গলির বর্জ্য অন্য গলিতে ফেলে রাখার ঘটনা দেখেছি। এবার এমনটি হয়নি। সকাল থেকে ভ্যানে করে বর্জ্য সরিয়ে ফেলেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

ভ্যানভরে পশুর বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

যোগাযোগ করা হলে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল মেয়র মহোদয় নিজ নিজ এলাকার বর্জ্য রাত ১২টা মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দেই। সেখানে বর্জ্য জমা হতে থাকে। রাতের মধ্যেই আমরা তা অপসারণ করি। কিছু কিছু স্থানে বাকি ছিল। সেগুলো সকালে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া আজ অনেকে কোরবানি দিয়েছেন। সেগুলো অপসারণের কাজ চলছে।

এদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য গুলশানের নগর ভবনে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হলো- ০২৫৮৮১৪২২০, ০৯৬০২২২২৩৩৩ ও ০৯৬০২২২২৩৩৪। এছাড়া ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপেও বর্জ্য অপসারণের তথ্য দিতে বলা হয় নগরবাসীকে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সিটি করপোরেশন।

এবারের চিত্রটা ভিন্ন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় কোনো গলিতে পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়নি 

বর্জ্য অপসারণের সার্বিক কার্যক্রমের খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকালে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। পরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের ৫৪টি ওয়ার্ডে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ১১ হাজার ৫০৮ কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা সফল হয়েছি।

মেয়র বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে নগরবাসীর মাঝে ছয় লাখ ৫০ হাজার ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার এবং পাঁচ লিটার আয়তনের এক হাজার পাঁচ ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়। করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় যাতে কারও মৃত্যু না হয়, সেজন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখারও আহ্বান জানান আতিকুল ইসলাম। 

নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে আমাদের এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

জেইউ/এমএআর/