কবর জিয়ারত করছেন এক বৃদ্ধ

সারা বছরই থাকে ব্যস্ততা। তাই হারানো প্রিয়জনদের কবর দেখার সময় হয়ে ওঠে না। তবে ঈদ উপলক্ষে স্বজনরা কবর জিয়ারত করতে আসেন, আসেন প্রিয়জনদের কবর এক পলক দেখতে।   

ঈদের পর দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেছে, গেটে থাকা ভিক্ষুকদের দান-খয়রাত করে ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করছেন স্বজনরা। এরপর যে যার মতো প্রিয়জনের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। 

অনেকে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল ঝরিয়ে দু হাত তুলে দোয়া করছেন। কেউ কেউ কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে মালিদের দিয়ে প্রিয়জনের কবর পরিষ্কার করাচ্ছেন। কবরের সরে যাওয়া মাটি ঠিকঠাক করাচ্ছেন অনেকে।  যে যার মতো করে সময় কাটাচ্ছেন।  

রাজধানীর মহাখালী থেকে একটি পরিবারের সদস্যরা এসেছেন প্রিয় স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। কবর জিয়ারত শেষে এ পরিবারের পুরুষ সদস্য মো. সোহেল আহসান নিজের মোবাইলে ভিডিও কলে স্বজনের কবর পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখাচ্ছেন। আর উপস্থিত নারী সদস্যরা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়ছেন।

সোহেল আহসান বলেন, এটি দাদির কবর। তিনি দুই বছর আগে মারা গেছেন। বছরের দুই ঈদ এবং যখনই সময় পাই, তখনই দাদির কবর জিয়ারত করতে ছুটে আসি। আজ আমার সঙ্গে পরিবারের নারী সদস্যরাও এসেছেন কবর জিয়ারত করতে। চাচা অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। তাই ভিডিও কলে তাকে তার প্রিয় মায়ের কবর দেখালাম।

তিনি বলেন, কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা একজনকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দিই, যেন দাদির কবরে তিনি মাটি দেন এবং ফুল গাছ লাগান। কিন্তু এরপরও তিনি ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন না।  

রাজধানীর ফার্মগেট থেকে বাবার কবর জিয়ারত করতে ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মো. নেয়াজ। তিনি জানান, ২০০০ সালে তার বাবা মারা যান। যখনই সময় পান, বাবার কবর জিয়ারত করতে এখানে ছুটে আসেন। ঈদে যেহেতু ছুটি আছে, তাই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন দাদার কবর দেখাতে।

আজিমপুরের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন এক বছর আগে তার তিন বছরের সন্তানকে নিজ কাঁধে করে নিয়ে এসে এখানে কবর দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ এসেছেন সেই প্রিয় সন্তানের কবর জিয়ারত করতে। জিয়ারত শেষে চোখের পানি ফেলতে-ফেলতে সন্তানের কবর পরিষ্কার করাচ্ছেন তিনি।

আজিমপুর কবরস্থানে চারপাশে ফুল দিয়ে সাজানো একটি কবরের পাশে বসে আছেন ইউসুফ মিয়া। তিনি জানালেন, এটি ইয়া আলী মাওলা মাদারের কবর। তিনি আলী মাওলার ভক্ত। ব্যবসার বাইরে যখন সময় পান, তখন কবর জিয়ারত করতে আসেন। এখানে এলে তার প্রশান্তি লাগে। ঈদে যেহেতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই আজ এসেছেন।

এছাড়া, প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত না করলেও কবরস্থানে আসা কয়েকজন নারীকে গোলাপজল ছিটিয়ে দিতে দেখা গেছে। কবরস্থানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকাদের অবহেলার কারণে প্রিয়জনদের কবরের মাটি সরে যাওয়া এবং অপরিষ্কার থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে কাউকে কাউকে।  

কবরস্থানে যে শুধু প্রিয়জনের কবর জিয়ারতে অনেকে আসেন এমনটি নয়। অনেকে আসেন প্রিয়জনকে রেখে যেতে। এমনই একজন রাজধানীর ওয়ারীর বাসিন্দা আহসান। বাবার মরদেহ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি এসেছেন। ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিয়ে তার বাবা চলে গেছেন। বাবাকে এখানেই রেখে যাবেন তিনি।  
 
এএইচআর/আরএইচ