চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট এলাকার ১৮ বছরের নাফিজা জাহান কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে নিয়ে আসা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভর্তি করা হয়েছে করোনা ওয়ার্ডে। সিট দেওয়া হয় মেঝেতে। 

হাসপাতালে কথা হয় নাফিজার ভাই রবিউল হোসেন মুন্নার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে বোনের জ্বর আসে। এর পরপরই করোনা পজিটিভ হয়। আজ হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ওর এই মুহূর্তে আইসিইউ দরকার। কিন্তু চট্টগ্রামের পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে কোথাও সিট পাইনি। তাই এখানে নিয়ে এসেছি। আমার বোনের আইসিইউ দরকার। এটুকু বলেই রবিউল করোনা ওয়ার্ডে বোনের কাছে চলে যান।

নাফিজার মতো এমন আরও পাঁচ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টাকা থেকে ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে দেখা গেছে। রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে হাসপাতালটির মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

এদিকে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা রোগীদের চাপ সামলাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ জন চিকিৎসক চাওয়া হয়েছ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির।

চমেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে করোনার ইউনিটের আইসিইউ ১০টি বেডেই রোগী ভর্তি আছে। সেই সঙ্গে করোনা ওয়ার্ডে ৩২৭ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ২৭ জনকে মেঝেতে ম্যাট্রেস রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় নগরীর ঝর্ণাপাড়া থেকে আসা খোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি শালীকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে এসেছেন। খোরশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার শালীর চার দিন আগে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। তাই এখানে নিয়ে এসেছি।

মেডিকেলের নিচ তলায় করোনা ইউনিটের সামনে কথা হয় ফেনীর আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার দিন আগে মাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। মায়ের অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে। আমরা সিট পেলেও অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে মেট্রেস দিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখেছি। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি।

এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রোগীর চাপ বাড়ছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০০ বেডের ব্যবস্থা ছিল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। এক সপ্তাহ আগে ২৭০-৮০ জনের মতো রোগী থাকত। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিনশর বেশি রোগী থাকছে। এজন্য কিছুটা চাপের মধ্যে আছি।

তিনি বলেন, ঈদের আগেই ধারণা করেছিলাম গরুর বাজার, ঈদ, মানুষের আসা-যাওয়া, বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে করোনা রোগী বেড়ে যেতে পারে। এটা মাথায় রেখে আমরা কিছু প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তার মধ্যে বেডের মাঝে অক্সিজেন পোর্ট স্থাপন করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল রোগীকে বেড দিতে না পারলেও যেন মেট্রেস দিয়ে বিছানা করে অক্সিজেন দিতে পারি। এখন তাই করা হচ্ছে।

এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি এ অবস্থা আরও কিছুদিন চলবে। ইতোমধ্যে করোনা ইউনিটের অনেক চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। ফলে করোনা ইউনিটে যারা এখন চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের ওপর একটা চাপ পড়ে গেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেলের করোনা ইউনিটের জন্য ৩০ জন চিকিৎসক চেয়েছি। সেই সঙ্গে কিছু নার্সও চেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, চমেকে ৩০টি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সচল আছে। এর মধ্যে সব সময়ই ২০টি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সেবা দিতে।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন, যা এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ। আর এ সময়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩১০ জন, যা এক দিনের হিসেবে সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার ৩৮.৬৫ শতাংশ।

কেএম/এসএসএইচ