মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধির ওপর এবং চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের ২১ সন্তান।

বুধবার (২৮ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে পরিচালিত করছেন। তার সুশাসনকে কলঙ্কিত করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু আমলা রেলওয়ের সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের দুঃসাহস দেখিয়েছেন। চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের কঠোর বিরোধিতার পরেও প্রকল্পটি বাতিলের কোনও ঘোষণা এখনও দেওয়া হয়নি। 

বিবৃতিতে তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও প্রকৃতি ধ্বংস করে সিআরবি নয়; পাহাড়তলী, কুমিরা কিংবা অন্য যেকোনো জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আরও জানান, তারা হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে নয়, জায়গার বিরুদ্ধে। বন্দরে হাসপাতাল নির্মাণের জায়গা পরিদর্শন করেছেন দেবী শেঠীর মতো খ্যাতিমান চিকিৎসক। সেই জায়গাটিও হাসপাতাল নির্মাণের উপযুক্ত জায়গা।

বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, সিআরবিতে এক হাসপাতাল নির্মাণেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থলসহ বহু স্মৃতিচিহ্ন। হাসপাতাল তৈরির জন্য যে ছয় একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাকসু) জিএস আবদুর রবের সমাধি, শহীদ শেখ নজির আহমদের সমাধিস্থল। 

হাসপাতাল হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডবল এমএ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভও বিলীন হয়ে যাবে। শহীদ আবদুর রবের নামে থাকা রেলওয়ে কলোনিটিও ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের তৎকালীন কমান্ড অফিস কাঠের বাংলোটি। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত স্থান বাঁচাতে এখানে আমরা হাসপাতাল চাই না। 

বিবৃতিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা হলেন– চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটি সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, অবিনাশী ৭১-এর সেক্রেটারি পারভেজ মান্নান, স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারি উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি, মহিলা শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুবা আহসান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পরিচালক শরফুদ্দীন চৌধুরী রাজু, রহমত উল্লাহ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ভাস্কর, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সেক্রেটারি এসএম ফরহাদ আলী, দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি আবু তৈয়ব সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ নেতা তাজিব সুলতান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু, সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজিশ ইমরান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার’স সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।

কেএম/আরএইচ