আবারও অস্থিতিশীল চালের বাজার। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে চাহিদা বেশি মোটা চালের। সেই চালের দামও বেড়ে এখন ৫০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ৪ শতাংশ এবং সরু ও মাঝারি চালের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। 

শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইরি বা স্বর্ণা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। এছাড়া মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, সরু চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় দৈনন্দিন হিসাব মেলাতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণের | ছবি- সংগৃহীত  

কী বলছেন বিক্রেতারা? 

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের চাল বিক্রেতা হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চালের দাম একটু বেশি। মিল মালিকরা প্রতি সিজনে চাল কিনে মজুদ করে রাখেন। এ কারণেই এখন চালের দাম বেশি।  

মালিবাগের হালিম নামের আরেকজন বিক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে চালের দাম অনেক বেশি। পাইকারি বাজারে চালের দাম বেশি, তাই খুচরাও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বিক্রেতাদের অভিযোগ অস্বীকার মিল মালিকদের

কুষ্টিয়ার চালের মিল মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, মিল মালিকরা নয়, ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই অধিক মুনাফার আশায় অবৈধ মজুদ করেছেন। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। 

বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার | ছবি- সংগৃহীত

দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানির সিদ্ধান্ত 

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে অবস্থা অনুযায়ী পরিমাণ আরও বাড়তে বা কমতে পারে। 

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না আমরা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। ওএমএসের বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। এটা কিন্তু আমাদের ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। সেক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি, বেসরকারিভাবে কিছু আমদানি হোক। সেটার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হবে। আমরা চাই কৃষক এবং ভোক্তা কেউই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই যতটুকু দরকার ততটুকুরই আমদানি করা হবে। আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করছি। প্রয়োজন হলে আরও বেশি করতে পারি। তবে যদি দেখা যায় আউশ ধানের উৎপাদন অনেক ভালো হয়ে গেছে, তখন হয়তো আমদানি কমিয়ে দিতে পারি। 

আবারও ওএমএস কার্যক্রম শুরু

গত ২৪ জুলাই (শনিবার) থেকে রাজধানীতে পুনরায় ওএমএস কার্যক্রম শুরু করেছে খাদ্য অধিদফতর। এ কার্যক্রমের আওতায় স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে।

খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ১০৫টি দোকানে ডিলারের মাধ্যমে দোকানপ্রতি দেড় টন চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন ২০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের প্রতিটিতে তিন টন চাল বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা কেজিপ্রতি ৩০ টাকা করে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারছেন।  
 
অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান

অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযানে নামবে সরকার। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরকার ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে, এটি আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান শুরু হবে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে চাল আমদানি হচ্ছে এবং বেসরকারিভাবে চাল আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ভোক্তাদের প্রতি মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মানবিক হতে হবে। অতি মুনাফাখোর ও অবৈধ মজুদদারদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।

এসএইচআর/এইচকে