বিধিনিষেধে শিল্প-কারখানা খোলায় প্রতিবাদ
সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের সময়ে আগামী ১ আস্ট থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।
শনিবার (৩১ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে সংঘটির সভাপতি হাবিবুল্লাহ বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলমের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনার উচ্চ সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা বিবেচনায় প্রতি তিন জনে এক জন শনাক্ত হচ্ছে এবং দুশতাধিক মৃত্যু ঘটছে; আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বিবেচনায় নিলে তা দ্বিগুণের বেশি। এরকম অবস্থায় চলমান লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ অধিদফতরের প্রস্তাবের পরও সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ ৩ দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জানানো হয় ৫ আগস্টের আগে শিল্প-কলকারখানা চালু হবে না।
এরপরই মালিকরা সরকারের বিধিনিষেধ ও আইনকে তোয়াক্কা না করে জানিয়ে দেন ১ আগস্টের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়া না হলে ‘লে-অফ’ ঘোষণা করা হবে। মালিকদের এমন ঘোষণায় আইন অমান্য করার কারণে সরকারকে যেখানে কঠোর হওয়ার কথা, সেখানে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মালিকদের প্রতি অনুনয় করে ছাঁটাই, লে-অফ না করার অনুরোধ জানান। অথচ নিতান্ত পেটের দায়ে জীবিকার খোঁজে রাস্তায় নামা শ্রমিকদের জরিমানা ও শাস্তি দিতে সরকার পিছপা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
আরও বলা হয়, শ্রেণি বিভক্ত এই রাষ্ট্রে আবারও এ ঘটনায় প্রমাণ হয় সরকারের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে মালিকদের স্বার্থরক্ষাই বড়! গার্মেন্টস মালিকরা ঈদের আগে শ্রমিকদের সর্বোচ্চ খাটিয়ে ছুটি দেন ঈদের আগের দিন। সেই সময়ই অনেক মালিক ২৭-৩১ তারিখের মধ্যে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার কথা শ্রমিকদের জানিয়ে দেন। এমনকি অনেক মালিক শ্রমিকদের ঈদ বোনাসও পরিশোধ করেননি। মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বোনাস পরিশোধে বারবার সরকারের কাছে প্রণোদনা নিচ্ছেন। ঈদের ছুটি বাদ দিলে মাত্র এক সপ্তাহের কারখানা বন্ধের কথা বললে মালিকরা রফতানি আদেশ তথা বিদেশের বাজার হাত ছাড়া হওয়া এবং লোকসানের কথা সামনে আনেন। যদি এত রফতানি অর্ডার থেকে থাকে তাহলে শ্রমিকদের মজুরি বোনাস পরিশোধের সময় কেন বার বার লোকসানের অজুহাত তুলে ধরা হয়। উৎপাদন যন্ত্র ও প্রচলিত ব্যবস্থার মালিকের কাছে মুনাফাই শেষ কথা, রাষ্ট্রের বিধিনিষেধ সেখানে তুচ্ছ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৩ জুলাই থেকে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। জীবিকা রক্ষায় ২২ জুলাই থেকেই অনেকে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই দ্বিগুণ/তিনগুণ ভাড়া দিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সহ্য করে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করে। আর ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় শুক্রবার রাত থেকেই শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে, রিকশা-ভ্যানে, ট্রাকে, প্রাইভেট গাড়িতে করে রাজধানীমুখী শ্রমিকদের বানের জলের মতো জনস্রোত শুরু হয়েছে।
এমএইচএন/জেডএস