ডা. নাজমুল ইসলাম, আশরাফুল আলম হান্নান, ইসমাইল হোসেন বাবু ও ফাহাদ বিন বেলায়েত

যেখানে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে স্বজনদের যেতে ভয়, সেখানে করোনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দিন-রাত ছোটেন স্বেচ্ছাসেবকরা। যারা প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্ত হবার ভয়কে পেছনে ফেলে মানবসেবার এক অনন্য নজির গড়ছেন। দেশে তরুণদের এমন অনেক সংগঠন কাজ করছে।

আজ জানব ৪ তরুণের গড়া ৪টি সংগঠনের গল্প। যারা করোনার এ দুর্দিনে মানুষের জন্য নিজদের বিলিয়ে দিয়েছেন। সংগঠনগুলো হলো- ডু সামথিং ফাউন্ডেশন, স্বপ্ন নিয়ে, সবুজ বাংলাদেশ ও মেঘ ফাউন্ডেশন। 

ডু সামথিং ফাউন্ডেশন 

স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. নাজমুল ইসলাম। বিগত সময়ে কাজের ভিন্নতা থাকলেও দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে এ সংগঠনটি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ শুরু করে। প্রথম দিকে মুঠোফোনের মাধ্যমে সারাদেশে চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসাসেবা দেয়ার কাজটি হাতে নেয় সংগঠনটি। 

সংগঠনটির উদ্যোগে ২২টি জেলায় করোনা রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকায় ২টি জোন, খুলনায় ৩টি জোন, সাতক্ষীরায় ৩টি জোন, রাজশাহীতে ২টি জোন। মোট ২০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। আর এতে কাজ করছেন ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী। 

ডা. নাজমুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট ভালোবাসা পাচ্ছি। মানুষ বলছে, যেখানে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসতে ভয় পান, সেখানে আপনারা আসেন। এতে অনেকেই সুস্থ হচ্ছেন, সেবা পাচ্ছেন। হাসপাতালের যে কষ্ট, সেটা লাঘব হচ্ছে। 

স্বপ্ন নিয়ে

শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন বা মানুষের জীবনের পথচলা সহজ করতে, অসহায় মানুষদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করলেও সংগঠনটি করোনা প্রাদুর্ভাবের পর করোনা কেন্দ্রিক বেশ কিছু সামাজিক কাজের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। করোনায় ঘরবন্দি হাজারো মানুষকে খাদ্যসহায়তা, মানুষকে সচেতন করতে মাস্ক, সাবান বিতরণ, বাজারে বাজারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি। করোনার শুরু থেকেই মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছে। ১৮টি সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করছেন এ সংগঠনের মোট ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী। লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকায় ৭০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে সংগঠনটি। 

প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, করোনা রোগীর পাশে মানুষ যেতে ভয় পেতেন। এমন অসহায় রোগীর খবর পেলেই  ডাক্তারদের মতো করে স্বেচ্ছাসেবকরা সেবা দিয়েছেন। করোনা রোগীদের পাশে গভীর রাতেও সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। টাকা খরচ করতে হয় না। কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে- অক্সিজেন সিলিন্ডার কম। যে কারণে আরও বেশি সংখ্যক রোগীকে সেবা করা দুষ্কর। 

সুবজ বাংলাদেশ 

মূলত পরিবেশবাদী সংগঠন হলেও জাতির দুর্দিনে কাজ করছে সবুজ বাংলাদেশ। করোনাকালের শুরু থেকেই করোনায় মৃতদের লাশ দাফনে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। অন্যদিকে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছে জাতীয় এ পরিবেশবাদী সংগঠন। ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে মানুষের পাশে ছুটে যাচ্ছেন সংগঠনের সদস্যরা। 

অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, মানুষজন প্রথম দিকেই আমাদের কল দেয় না। রোগীর যখন অবস্থা সংকটাপন্ন তখনই আমাদের নক করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা সব সময় ভালো হয় তা না। এ ক্ষেত্রে দ্রুত রোগীর কাছে পৌঁছাতে মোটরসাইকেলই ভরসা। 

মেঘ ফাউন্ডেশন

মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে কাজ করা, মরণোত্তর চক্ষুদান এবং নারীদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য কাজ করা এ সংগঠন করোনাকালে কাজের ধরন বদলে করোনায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের মাধ্যমে করোনায় মৃত মানুষের লাশ দাফন এবং আক্রান্তদের জরুরি অক্সিজেন সহায়তার জন্য কাজ করছে। ১২ জন কাজ করছেন ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমে। ৬ জন মৃতদের লাশ দাফন ও বাকি ৬ জন রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকে কাজ করা এ সংগঠনটি ইতোমধ্যে ৫০ জনকে জরুরি অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। 

প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান সমস্যা অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট। আমাদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের কাজ হচ্ছে জরুরি অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেয়া। অনেক সময় দেখা যায়, অক্সিজেনের সঠিক  ব্যবহার না জানার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়। তাই শুধু অক্সিজেন পৌঁছে দিলেই হবে না। এর সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করতেও গুরুত্ব দেই আমরা। এছাড়া করোনা রোগী জরুরি পরামর্শ চাইলে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। 

এইচকে