করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে খুলবে দোকানপাট, শপিংমল; চলবে গণপরিবহন, খুলবে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ১১ আগস্ট থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ আর থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ১৪ হাজার কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ১১ আগস্টের পর ভ্যাকসিন ছাড়া কেউ মুভমেন্ট করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে । আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে হলেও পুলিশকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে। 

মন্ত্রী বলেন, ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট খুলে দেওয়া হবে। ওইদিন থেকে সড়কে পুনরায় গণপরিবহন চলাচল করবে। ১০ তারিখ পর্যন্ত বিধিনিষেধের সময়ের মতো চলবে, ১১ তারিখ থেকে খুলবে অফিস। 

তিনি বলেন, আগামী ১ সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওয়ার্ড-ইউনিয়নে ৫ থেকে ৭টি কেন্দ্র করে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে দৌড়াতে হবে না, আমাদের লোকজনই তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।

কিছু শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য কারখানাও আমরা খুলে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১ তারিখ থেকে সব দোকানপাট, যানবাহনও চলবে। তবে সব একত্রে না। আমরা লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুরোধ করব, বাই রোটেশনে যাতে চলে।’

উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনে করেন, গাজীপুর থেকে ১০০ গাড়ি আসে প্রতিদিন ঢাকায়। ১০০ না, ৩০টি আসুক বা ৫০টি আসুক। আজকে এগুলো যাবে কালকে অন্যগুলো যাবে। এরকম তারা নির্ধারণ করে দেবে। শ্রমিক, পরিবহন নেতা এবং যারা পরিবহনের মালিক, তাদের সঙ্গে বসে।’

লঞ্চ, স্টিমার আছে, রেল আছে, সেগুলোও চলবে। সব যে পরিমাণে আগে চলেছিল, সে পরিমাণ না চলে সীমিত আকারে...কর্তৃপক্ষ সেগুলো নির্ধারণ করে জনগণকে অবহিত করবে। যেমন- রেল হয়তো ১০টা চলত, এখন ৫টা চলবে। কোন সময়ে কোনটা ছাড়বে এবং কীভাবে যাবে, এগুলো স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও ডিপার্টমেন্ট জনগণকে অবহিত করবে, যাতে করে কোনো গ্যাপ না থাকে, বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সশরীরে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। অন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে পুলিশকেও ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে কিছু জরিমানা করতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাদেশ লাগবে, আমরা হয়তো সেদিকেই যাব।

স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের জন্য সভায় জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ৭ আগস্ট থেকে ৭ দিনের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মোট ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামের বয়স্কদের আগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

করোনার সংক্রমণরোধে সব ধরনের অফিস বন্ধ রেখে গত ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করে সরকার। এরপর কোরবানির ঈদের আগে গত ১৫ জুলাই থেকে আট দিনের জন্য সব বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়া হয়। পরে আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেই বিধিনিষেধ এখনো চলছে। তবে এর মধ্যেই গত ১ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে রফতানিমুখী শিল্প ও কলকারখানা।

দেশে করোনার সবশেষ পরিস্থিতি

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৯৭ জনে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৭৭৬ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ জনে।  

এসএইচআর/জেডএস/জেএস