বুধবার দুপুর ২টা ২০ মিনিট। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে প্রায় শতাধিক মানুষের সমাগম। কেউ দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ মাটিতে বসে। আবার কেউ দুই হাত দিয়ে গ্রিল ধরে অপেক্ষা করছেন। পুড়ে অঙ্গার প্রিয়জনের মরদেহ পাওয়ার জন্য এ অপেক্ষা তাদের।

গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ শ্রমিকের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ আজ হস্তান্তর করবে সিআইডি। এই মরদেহগুলো বুঝে নিতেই স্বজনদের এ অপেক্ষা।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ জানায়, মরদেহগুলো পুড়ে অঙ্গার ও বীভৎস হয়ে গেছে। মুখ দেখে এগুলো চেনার উপায় নেই। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাদের দাঁত ও টিস্যু সংগ্রহ করে পরিবারের সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়েছে।

সরেজমিনে ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা গেছে স্বজনদের ভিড়। এখানে স্বজনরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ডাকের অপেক্ষা করছেন। মরদেহ কফিনে নেওয়া হলেই ডাক দেওয়া হচ্ছে স্বজনদের। একে একে তারা যাচ্ছেন মর্গের লাশকাটা ঘরের সামনে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন তাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়ে মরদেহ বুঝিয়ে দিচ্ছে।

মেয়ের মরদেহ নিতে আসা নেত্রকোনার মোহাম্মদ আলী বলেন, ২৫ দিন অপেক্ষায় ছিলাম। গতকাল ফোন পেয়ে ভোরে চলে আসি। মেয়েকে দেখে চিনতে পারিনি। অন্তত তার শরীরটা মাটিচাপা দিয়ে শান্তি পাবো।

দুপুর থেকেই ঢামেক জুড়ে স্বজনদের আহাজারি। মায়ের জন্য মর্গে আসা জাকিরের কান্না যেন কোনোভাবেই থামছে না। জাকিরের মা জাহানারা বেগম ওই কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন। মাকে নিতে না পারলেও এবার মায়ের মরদেহ কিশোরগঞ্জের মাতুয়াপাড়ায় নিয়ে যাবেন তিনি।

মায়ের কফিনের সামনে আহাজারি করে জাকির বলছিলেন, ‘আমার মা তো চলে গেল। আর তো পাবো না। আমার মাকে ফিরিয়ে দেন কেউ।’

১৬ বছরের মুন্নার মরদেহ নিতে এসেছে বাবা গিয়াস উদ্দিন। নিজেকে সামলাতে পারবেন না বলে তার সঙ্গে এসেছেন মুন্নার ফুপা কুতুবউদ্দিন, ফুপু রোকসানা।

এছাড়াও কারখানার কর্মচারী শাহীনুরের মরদেহ বুঝে নিয়েছে ১৪ বছরের তানিয়া, মোহাম্মদ আলীর মরদেহ নিয়েছে তার বাবা শাহদাত খান। ১২ বছরের হাসনাঈনের নিথর মরদেহ নিতে এসেছেন তার মা নাজমা।

উল্লেখ্য, ৮ জুলাই সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়।  

ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পুলিশ তাদের চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে মালিক আবুল হাসেমসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হাসেমের দুই ছেলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

এআর/এমএইচএস/এনএফ