ফেসবুক লাইভে এসে আইনশৃঙ্খল বাহিনী নিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরূপ মন্তব্যের তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে পরীমণি ও প্রযোজক রাজকে আটকের বিষয়ে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নে জবাবে একথা বলেন তিনি।

ফেসবুক লাইভে পরীমণি ‘কারা যেন হত্যা করতে আসছে, কেন তারা পরিচয় দিচ্ছে না, সাদাকালো পোশাকে আসছে, একবার তিনি ডাকাত আসছে বলে প্রচার করেন। এব্যাপারে আপনারা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি-না। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র‌্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, তিনি ফেসবুক লাইভে এসে কেন এধরনের বিভ্রান্তিকর ও বিরূপ মন্তব্য করেছেন তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। র‌্যাব যখন অভিযান করে তখন আমাদের গোয়েন্দা শাখা, সাদা পোশাকের সদস্যরা নিয়োজিত থাকেন। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, তিনি সংক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো, তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখবো।

পরীমণির বাসায় মিনিবার, মদের সাপ্লায়ার রাজ
সংবাদ সম্মেলনে এ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, পরীমণির বাসায় মিনি বার ছিল। তার ফ্ল্যাটে নিয়মিত আয়োজন করা হতো ঘরোয়া পার্টির। সেখানে মদের সাপ্লাই করতো আটক নজরুল ইসলাম রাজ। রাজসহ অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহল সেবন ও পার্টিতে অংশগ্রহণ করতো। পরীমণি নিজেও ভয়ঙ্কর মাদক আইস, এলএসডিসহ নানা মাদকে আসক্ত। তার নিজের মদের লাইসেন্স থাকলেও সেটা ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। বিপুল পরিমাণ মাদক রাখাও সে লাইসেন্সের লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য দেয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানী এলাকায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি (২৬) ও তার সহযোগী নজরুল ইসলাম ওরফে রাজসহ (৩৯) ৪ জনকে আটক করা হয়।
আটক অন্যরা হলো- পরীমণির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) এবং রাজের ম্যানেজার মো. সবুজ আলী (৩৫)। পরীমণির বাসা থেকে মিনি বার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশি মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী, এলএসডি; আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের হতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়।

মঈন বলেন, আটক পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) জীবনে অধ্যায়নরত অবস্থায় চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে চিত্র জগতে অন্তর্ভুক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন।

পিরোজপুর হতে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে গ্রেফতার নজরুল ইসলাম রাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে তিনি জানান।
আটক পরীমনি ২০১৬ সাল হতে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট হতে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি আয়োজন করতেন। আটক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশগ্রহণ করত।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কারো বাসায় মিনি বার থাকা আইনসিদ্ধ নয়। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, তিনি অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত ছিলেন। পরীমণির বাসায় রাজের সরবরাহ করা মাদকে ও আয়োজনে নিয়মিত ডিজে পার্টির আয়োজন করা হতো। কিন্তু পরীমণির মাদকের একটি লাইসেন্স আমরা পেয়েছি কিন্তু সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাছাড়া সেই লাইসেন্স অনুযায়ীও তিনি মিনি বার পরিচালনা বা বিপুল পরিমাণ মাদক রাখতে পারেন না।

জেইউ/এসএম