র‍্যাবের অভিযানে আটক নজরুল ইসলাম রাজ

রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজের শোবিজ জগতে ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে তার কোনো মাল্টিমিডিয়া ছিল না। ২০১৪ সালের পর নাটক ও সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেন রাজ মাল্টিমিডিয়া। এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে তিনি অনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন। অভিযান চালিয়ে রাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিস থেকে পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট ও উপাদান জব্দ করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাসের পর ঢাকায় এসে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন রাজ। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতে বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নামে-বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসা ও চিত্রজগতের দুই ক্ষেত্রে তার যোগাযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন। গ্রেফতার হওয়া শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন রাজ।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা, বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করতেন। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিতেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যে দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হতো। আগত ব্যক্তিদের চাহিদা ও পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করত সিন্ডিকেটটি।

র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত রাজ সিন্ডিকেট ব্যবহার করে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় অগ্রসর হতেন এবং স্বার্থ চরিতার্থ করতেন। তার ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ কার্যালয়টি নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতো। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, এ জাতীয় অবৈধ উৎস থেকে আসা অর্থ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসা, ঠিকাদারি ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করতেন। এসব ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন তিনি। গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেকের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে।

রাজ-চক্রের মাধ্যমে কোন কোন মডেল ডিজে পার্টিতে অংশ নিতেন- এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, ডিজে পার্টিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন মডেলের নাম আমরা জেনেছি গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে। তথ্যগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে জানানো হবে। রাজ নিজেই মাদকের সরবরাহকারী। তার বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদক পেয়েছি। রাজ ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের সবার সম্পর্কে তদন্ত করা হবে।

রাজের বিরুদ্ধে হচ্ছে দুই মামলা

বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দের ঘটনায় মাদক আইনে রাজের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এছাড়া তার বাসা ও মোবাইল থেকে কিছু ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়া গেছে, যা তিনি অন্যদের বিরুদ্ধে এবং নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেন। তিনিসহ তার সহযোগী মো. সবুজ আলীর বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনেও মামলা করা হবে।

জেইউ/আরএইচ/জেএস