বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির দাবি করে গতবছর দেশে আলোচনায় এসেছিল গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। এরপর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও আলোর মুখে দেখেনি টিকাটি; যার নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গভ্যাক্স। 

গ্লোব বায়োটেক এখন অভিযোগ করছে টিকাটি যাতে উৎপাদন না করা যায় সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আর এর জন্য তারা দায়ী করছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদকে (বিএমআরসি)।  

গ্লোবের দাবি, সরকারের সহযোগিতা ও ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পরও বিএমআরসির কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বরং টিকাটি যেন উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় অতিবাহিত হয়, এমনকি এটি যেন আলোর মুখ না দেখে সেই চেষ্টা করা হয়েছে। 

আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে এসব অভিযোগের কথা জানান।

তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদন না দিয়ে বিএমআরসি বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এর অর্থ হলো- ভ্যাকসিনটি যাতে উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় অতিবাহিত হয় এবং এটি যাতে আলোর মুখ না দেখে। যদি বানরের শরীরে প্রয়োগের প্রয়োজন হতো তবে বিএমআরসি আরও পাঁচ মাস আগে গ্লোব বায়োটেককে এসব শর্ত উল্লেখ করতে পারত বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

গ্লোব বায়োটেকের এই ব্যবস্থাপক অভিযোগ করে বলেন, আমরা সরকারের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু আমরা কেবল বিএমআরসির সহযোগিতা পাইনি।

ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বানরের ওপর টিকার পরীক্ষার জন্য বিদেশে চেষ্টা করেছি। ভারত বলছে জিটুজি পদ্ধতিতে আবেদন করার জন্য, তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফল পাইনি। উন্নত দেশগুলো বলছে, এমআরএনএ (mRNA) টিকা বানরের ওপর পরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু বিএমআরসি বলছে করা লাগবে। তাই বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসরণ করে বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে বানর সংগ্রহ করেছি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে বানরের ওপর পরীক্ষা করছি।

তবে এসব অভিযোগকে অবৈজ্ঞানিক এবং বানানো গল্প বলে দাবি করেছে বিএমআরসি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএমআরসি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের মতো আবেগ নিয়ে কাজ করি না। আমরা আমাদের যথাযথ পন্থানুসরণ করেই এগোচ্ছি। তাদেরও এসব আজগুবি অভিযোগ আর চিন্তা ভাবনা রেখে সঠিকভাবেই এগোতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গভ্যাক্স একটি দেশীয় টিকা। দেশীয় কোনো সফলতা এলে তা আমাদের জন্যও গর্বের বিষয়। কিন্তু তাই বলে আমরা তো অনৈতিক বা নিয়মবহির্ভূত কোনো পন্থায় তাদের মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমোদন দিতে পারি না। আমরা অনুমোদন দিলাম, এরপর বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটল, এ দায় কে নেবে? তাই আমরা চাচ্ছি মানবদেহে ট্রায়ালের আগে যেন অন্য কোনো প্রাণীর দেহে ট্রায়াল হয়। সেখানে যদি প্রমাণিত হয় এটা ঝুঁকিমুক্ত, তাহলে আমরা মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমতি দিতে এক মুহূর্তও দেরি করবো না।

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, তারা ট্রায়াল শুরু করেছে বিষয়টা আমরা জানি না। তারা আমাদের কিছু জানায়নি, এমনকি জানানোও কোনো দায়িত্ব না। ট্রায়ালের সময় আমাদের জানাতে হবে, এমন কোনো শর্তও নেই। আমাদের শর্ত খুবই সাধারণ, তা হলো সঠিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থাতেই আসতে হবে।

গত বছরের ২ জুলাই করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের দাবি করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান এই টিকা উদ্ভাবনের দাবি করে। 

গ্লোব বায়োটেক তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে তারা তাদের টিকার টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স এনসিবিআই ডাটাবেসে জমা দিয়েছি, যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। 

অত্যাধুনিক এনিম্যাল সেন্টারে টিকার পূর্নাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে এবং যার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের বায়ো-আর্কাইভে প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

গ্লোব বায়োটেক বলছে, ফেজ-১ ও ফেজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন লিমিটেডের মাধ্যমে টিকাটির ফেজ-১ ও ফেজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে ১৭ জানুয়ারি জমা দেওয়া হয়। সেটা পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেয় বিএমআরসি। তাদের সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তরসহ সংশোধিত প্রোটোকল ও প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত ১৭ ফেব্রুয়ারি আবারও বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হয়। এর পাঁচ মাস পর গত ২২ জুন বিএমআরসি থেকে তাদের কাছে চিঠি আসে যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর অথবা শিম্পাঞ্জির ওপর টিকাটির ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে। 

গ্লোব বায়োটেক বলছে, তাই আমরা এখন বানরের ওপর পরীক্ষা করছি।

টিআই/এসএসএইচ/এনএফ