সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ও ডাটা সুরক্ষায় নীতিমালা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন গ্রাহক অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তায় কাজ করে যাওয়া সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। 

সংগঠনটি বলছে, মুক্ত বিশ্ব ও প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মুক্ত চিন্তা ও মনের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা, পারিবারিক কলহ, কপিরাইট সাইবার ক্রাইম সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে চলবে, তা নিশ্চয়ই কাম্য নয়।

বুধবার (১১ আগস্ট) সংবাদ মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে বর্তমান সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই আইনে কেবলমাত্র ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। প্রযুক্তি পণ্য বিক্রয়, ডাটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাউকেই আইনের আওতায় আনা হয়নি। যেমন- রামু ও নাসিরনগরের দুর্ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কেন্দ্র করে হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তির আওতায় বা জরিমানা করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডকে নিয়ে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে তা কতটুকু নীতি যোগ্য। আইনে অপরাধী প্রমাণিত না হওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়া  ট্রায়াল হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনত অপরাধ।

আরও বলা হয়, এরইমধ্যে রাশিয়া, ইউরোপ, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি ও সম্প্রতি ভিয়েতনাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, জার্মানি ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়াতে ২০ লাখ ব্যবহারকারী আছে, তাদের ক্ষেত্রে একটি আইন প্রণয়ন করে। আইনে বলা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট সম্পর্কে যদি কোনো অভিযোগ আসে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এমনকি আইন বিরোধী কোনো কনটেন্ট যদি কোন ব্যবহারকারী শেয়ার করে তবে তাকে ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। আর সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ৫ কোটি ইউরো জরিমানা করা যাবে। এরইমধ্যে ব্রিটিশ সরকার ক্ষতিকর কোনো কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ হিসেবে জরিমানা বা ওই প্রতিষ্ঠানকে ব্লক করে দেওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউটিউব প্রায় ৭৮ লাখ ভিডিও তাদের সাইট থেকে অপসারণ করেছে। এ কনটেন্ট সরানোর ক্ষেত্রে তারা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। আর ভিডিও দেখার আগেই সরিয়ে ফেলেছে তিন-চতুর্থাংশ। 

বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮৪ লাখ। রাষ্ট্র ও সব নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও ডাটা সুরক্ষায় তাই নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।

এমএইচএন/জেডএস