পর্যবেক্ষণে আটকে আছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের এখনো ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। রোববার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব বিন মোমেন।
সচিব বলেন, ‘দুই দেশের সরকার নীতিগতভাবে সম্মত আছে ফ্লাইট চালানোর বিষয়ে। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে এটি এখনো শুরু হয়নি। দু’একদিনের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশা করছি।’
বিজ্ঞাপন
গত ১৭ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘এয়ার বাবল’চুক্তির অধীনে শুক্রবার (২০ আগস্ট) থেকে সীমিত পরিসরে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হতে পারে।’
মন্ত্রীর বক্তব্যের পর বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমোদন না নিয়েই ঢাকা-কলকাতা ও ঢাকা-দিল্লি রুটে ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের ঘোষণায় ভারতে যেতে ইচ্ছুক রোগী ও তাদের স্বজনরা টিকিটও কেটে ফেলে। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাকে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে দিল্লির আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে দেশটিকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে গত ১১ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে প্রস্তাব ছিল ঢাকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
করোনার কারণে অনেকদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের অক্টোবরে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করে বাংলাদেশ। তবে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে আকাশপথে চলাচল বন্ধ করে দেয় ভারত। বাংলাদেশও করোনার বিস্তার ঠেকাতে ৫ জুলাই ভারতসহ ৮টি দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
সম্প্রতি ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ১৪ জুলাই ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ফ্লাইট চালুর অনুরোধ করা হয়।
টিকা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের সঙ্গে আলোচনা
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠক প্রসঙ্গে সচিব জানান, করোনা টিকা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশ জাপানের থেকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আরও টিকা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য টিকা চাওয়া হয়েছে। বলেছি, বাংলাদেশের আরও টিকার চাহিদা রয়েছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যদি জাপান আরও টিকা দিতে চায়, বাংলাদেশ সেটিকে স্বাগত জানাবে।’
রাশিয়া থেকে টিকা আনার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার টিকা চুক্তি নিয়ে সময় নিচ্ছে। কারণ রাশিয়াতে এখন করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। তাদের নিজেদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবকিছু এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। যে কোনো সময়ে টিকা কেনার চুক্তি সই হয়ে যাবে। বাংলাদেশ রাশিয়াকে চাপ দিচ্ছে, যাতে চুক্তিটি তাড়াতাড়ি হয়।’
এ সময় পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘চীনের সঙ্গে টিকা উৎপাদনে চুক্তি হয়েছে। টিকা নিয়ে আর দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রাখার বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে বিশ্বব্যাংক। জাতিসংঘ, জাপানসহ সবাইকে আমরা একই কথা বলছি। কেউ যদি আমাদের ভিন্ন কোনো কিছু বলতে চায় তবে তাদের শক্তভাবে বলছি যে আমরা কী চাই।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের উদ্বাস্তু পলিসি পেপারের বিষয় তাদের আমরা বলেছি যে নতুন নতুন বিষয় এলে সেটি কাজ হবে না, এক্ষেত্রে আমরা অনড়। এখন তারা বুঝতে পেরেছে আমরা কতটুকু ছাড় দেবো বা কতটুকু যাবো।’
এনআই/এসএম/জেএস