প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
মৌলভীবাজারে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, খাসিয়া ও গারোদের ওপর হামলা এবং তাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে যৌথভাবে রোববার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছে ছয়টি সংগঠন।
সংগঠন ছয়টি হলো, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নতুন নয় বরং ধারাবাহিক ঘটনারই বহিঃপ্রকাশ। এখন এটি আর ষড়যন্ত্রের পর্যায়ে নেই বরং তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন হওয়া এখন সময়ের ব্যপার। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে এ সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
তিনি বলেন, দেশের কয়জন আদিবাসী হঠাৎ করে ধনী হয়েছে এবং কয়জন বনবিভাগের কর্মকর্তা কোটিপতি হয়েছেন তার হিসাব নিতে হবে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা বনকে টার্গেটের মধ্যে নিয়ে তাদের আখের গোছানোর কাজে লিপ্ত থাকেন। আদিবাসীরা প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করেন। তারা প্রকৃতি ও বনভূমিকে লালন ও সংরক্ষণ করে বসবাস করে। বন তাদের ধর্মীয় চিন্তা এবং সংস্কৃতির মধ্যেই রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বন হচ্ছে খাসিদের ঐতিহ্যগত ভূমি। অথচ তাদের ভূমির কোনো কাগজপত্র নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করবে। আদিবাসীদের ভূমি কমিশন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না মর্মে আমি একটি লিখিত ডকুমেন্ট দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে বর্তমানে যে বনবিভাগ রয়েছে, তার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্রিটিশদের করে যাওয়া ১৯২৭ সালের আইন দিয়ে বনবিভাগ চলছে। এ বনবিভাগ বাংলাদেশের নয়, ব্রিটিশদের। বনের জমির ওপর বনবিভাগের বেশ মায়া, কিন্তু বনের ওপর নেই। এতগুলো মানুষের জীবন-জীবিকাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বনবিভাগ কী করে এখানে সামাজিক বনায়ন করে?
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে চরম অধিকার বঞ্চিত ৩০ লাখের বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যের অন্যতম ধারক ও বাহক। সারাবিশ্বে আদিবাসীদের প্রকৃতির সন্তান হিসাবে বিবেচনা করে জাতিসংঘের উদ্যোগে তাদের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আদিবাসীরা তাদের জীবন, জীবিকা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আচার-আচরণের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও যুক্ত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম প্রমুখ।
এমএইচএন/আরএইচ