ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় ‌‘একতায় মর্যাদা- ইউনিটি ফর ডিগনিটি’ নামক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে টেরে ডেস হোমস (টিডিএইচ) ইতালি, কর্মজীবী নারী (কেএন) ও সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন (সফ) নামের দুটি সংগঠন। রাজধানীর পোশাক শ্রমিক ও গৃহশ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পটির মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে- একটি টেকসই ব্যবসা কেবল মুনাফা নয় বরং সব স্টেকহোল্ডার এবং শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ও কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করা। উদ্দেশ্য বা কল্যাণ যত বড় ব্যবসা প্রসারের সুযোগও তত বেশি। পোশাক শ্রমিক ও গৃহশ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অধিকার এগিয়ে নিতে প্রকল্পটি এই সব কল্যাণ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখায় যে, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার চেয়ে সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন।

প্রকল্পটি আওতায় মিরপুরে ৬০০ পোশাক শ্রমিক ও ২৭টি কারখানার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়াও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও এর পরিচালনায় সহযোগিতা করছে। এছাড়াও কারখানাগুলোর মধ্যে অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা, হয়রানি বিরোধী কমিটিগুলোর সক্রিয়করণ ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির নিমিত্তে কাজ করছে। গৃহশ্রমিক সুরক্ষা নীতি ২০১৫ অনুযায়ী ১০০ গৃহকর্মী নিয়োগকর্তা ও ২০০ গৃহশ্রমিককে তাদের কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হয়।  

এই প্রকল্পের ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, কর্মজীবী নারী, গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নেটওয়ার্ক ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সঙ্গে যৌথভাবে, টিডিএইচ ইতালি ও সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (এমওএলই) সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করার জন্য নিম্নলিখিত দুটি অ্যাডভোকেসি ইস্যুতে একটি ন্যাশনাল ডায়লগের আয়োজন করতে যাচ্ছে- একটি হলো কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষর ও শ্রম আইনের সংশোধন। অপরটি হলো কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানির বিষয়ে হাইকোর্ট কর্তৃক ২০০৯ নির্দেশিকা বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি করা।
 
প্রকৃতপক্ষে, ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরো রিপোর্ট অনুযায়ী, নারীরা তাদের কর্মস্থলকে পরিবারের পরেই সম্ভাব্য দ্বিতীয় স্থান মনে করে যেখানে তারা নির্যাতনের শিকার হতে পারে।
 
কেএনের ২০১৯ সালের একটি গবেষণার জন্য ১১৩টি কারখানার দুই হাজার দুই জন পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে জরিপে তথ্য সংগ্রহ করেছে। উক্ত গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ৬৩ শতাংশ নারীশ্রমিক মৌখিক হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ মানসিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। একই সঙ্গে, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ১০ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। 

প্রাতিষ্ঠানিক খাত যেমন পোশাক শিল্পের নারীশ্রমিকদের অবস্থা যেখানে এই রকম, সেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ যারা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মতো নিরাপত্তাও পায় না। বাস্তবতা হলো, নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, হয়রানি, বৈষম্য হলো বাস্তবতা। ঘটনাগুলো কখনো প্রকাশ হয় কখনো হয় না। কারণ দরিদ্র এই শ্রমিকরা আশঙ্কা করে যে অভিযোগ করলে তাদের চাকরির নিরাপত্তায় বিপন্ন হতে পারে।

করোনার অস্থির সময়ে আমাদের ভয়-ভীতিগুলো আরও জটিল হয়ে উঠছে। যেখানে একজন ব্যক্তির বেঁচে থাকা ও চাকরি বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা, উৎপাদনের যৌক্তিকতা কমপ্লায়েন্স ও মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলোকে ছাপিয়ে উঠছে।

আর এ কারণে, অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে পরিবর্তনের সূচনা করতে নারীদের সংগঠন ‘কর্মজীবী নারী’ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে- যার মাধ্যমে নারীর নিরাপদে ও উন্নত পরিবেশে কাজের সুযোগ পেতে পারে। একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক, অহিংস ও বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সিরডাপ মিলনায়তনে একটি ন্যাশনাল ডায়লগ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক। ন্যাশনাল ডায়লগের সভাপতিত্ব করবেন সংসদ সদস্য শিরিন আখতার। আরও উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হ্যান্স লেমব্রেখ্ট। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শ্রম অধিদফতর, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিরা।

ওএফ