ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. পীযূষ কান্তি মিত্রের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিব্রত হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নানা মহলে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। 

এদিকে ভুক্তভোগী তিনজন রোগীর স্বজন পীযূষ কান্তির বিরুদ্ধে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢামেকের একাধিক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন চিকিৎসক হয়ে তার এই অপকর্মের কথা বলতে লজ্জা লাগছে। তারপরও বলছি, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলসহ যত হাসপাতালে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন সব জায়গাতেই তিনি এমন অনিয়ম করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই! তিনি (ডা. পীযুষ) প্রায়ই অনুমতি ছাড়া নার্সদের পোশাক পরিবর্তনের রুমে ঢুকে যান। এ নিয়ে নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকারের কাছে এবং পরিচালকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন নার্সরা।

চিকিৎসকরা আরও বলেন, প্রত্যেক অপারেশনে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন তিনি বেশিরভাগ সময় গভীর রাতে অপারেশন করেন। আর নানা অজুহাতে অসহায় রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী পাঠিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের কমিশন।

আরও পড়ুন : সব রোগী থেকেই অর্থ নেন ঢামেক সার্জন পীযূষ!

চিকিৎসকরা বলেন, পীযূষ কান্তির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিব্রত। এজন্যই সম্প্রতি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাকে অবরুদ্ধ করলে কোনো চিকিৎসক বাঁচাতে যাননি। তিনি নিজে অপকর্ম করছেন আর হাসপাতালের বদনাম হচ্ছে। তিনি চিকিৎসক সমাজের বদনাম করছেন। সম্প্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া ঠিক করে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালে নামার পর ১০০ টাকা দিয়ে চলে যান। চালক পেছন থেকে ডাকলে উল্টো তাকে চড় থাপ্পড় মারেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী অটোরকিশাচালক পরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি, ঢামেক হাসপাতাল সাংগঠনিক সংসদের সভাপতি মো. আবু সাইদ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমরা পরিচালকের কাছে গিয়েছিলাম। পরিচালককে ডা. পীযূষ কান্তি মিত্রের নানা অনিয়মের কথা মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী কর্মচারীরা লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে রোগীর তিনজন স্বজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন : ঢামেকে চিকিৎসকের কাণ্ড, স্যান্ডেল খুলে পেটালেন নারী কর্মী

অভিযোগকারী শিশু নাজিফার বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা পরিচালকের কাছে গিয়েছিলাম। আমরা স্যারকে সবকিছু বলেছি। আমাদের আবার ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।’

নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। তার বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক অনেক অভিযোগ পরিচালকের কাছে দেওয়া আছে। এখন পরিচালক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’

ডা. পীযূষ কান্তি মিত্রের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তাদের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি দেখি অভিযোগকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর কথা মিলে যাচ্ছে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেই তো হবে না। সেটা কতটুকু সত্য আমাকে যাচাই-বাছাই করতে হবে।’

নারী কর্মচারীর জুতাপেটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই নারী ও চিকিৎসকের মধ্যে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটি একটি আচরণ গত সমস্যা। সেখানে কোনো আর্থিক বিষয় ছিল না। সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। যার সঙ্গে সমস্যা ছিল আমরা তাকে (ডা. পীযূষ কান্তি মিত্র) ডেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। আর বলে দিয়েছি এ রকম কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

হাসপাতালের কর্মচারীদের অভিযোগ সম্পর্কে পরিচালক বলেন,‘কর্মচারীদের সঙ্গে যে সমস্যা হয়েছে সেটি তারা আমাকে মৌখিকভাবে বলেছে। আমি তাদের বলেছি আপনারা লিখিতভাবে অভিযোগ দেন তাহলে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

এসএএ/এসকেডি/জেএস