#দুটি কমিটি পর্যালোচনা করছে পদ্মা সেতুর টোল হার
#আইটিএসের আওতায় আসছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর দিন থেকেই টোল আদায়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু আগামী বছরের জুনে যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে সব ধরনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য টোলের হার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক ও কারিগরি কমিটি এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। সেতু কর্তৃপক্ষের আগামী বোর্ড সভায় টোল চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হারও তৈরি করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, গত ১ জুলাই থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যান চলাচলের জন্য টোল নেওয়া হবে। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ের সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণে দেরি হওয়ায় ও বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলের জন্য একটি পয়েন্টে টোল দিতে হবে। এখন অবশ্য ধলেশ্বরী সেতুতে টোল দিতে হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (টোল অ্যান্ড এক্সেল শাখা) ফাহমিদা হক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করা হবে পদ্মা সেতু চালুর পর। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে টোল আদায়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে এজন্য আইটিএস (ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম) স্থাপন করা হচ্ছে।

সওজ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম বা আইটিএসের আওতায় আসছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এ সিস্টেমের আওতায় এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা হবে। আইটিএস ব্যবস্থায় রিয়েল-টাইম, ট্রাফিক ও ভ্রমণের তথ্য নিয়ন্ত্রিত থাকে। এটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের চালু করা হয়েছে গতবছরের ১২ মার্চ। এ এক্সপ্রেসওয়েতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায়ের জন্য কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোলের অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে গাড়ির সামনের উইন্ড স্ক্রিনে একটি স্টিকার থাকবে। গাড়িটি যখন নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে যাবে তখন স্ক্যান করে গাড়ি সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টোলের অর্থ আদায় করা হবে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে তিনটি সেতু রয়েছে। এসব সেতুর টোলও সমন্বিতভাবে আদায় হবে। এ এক্সপ্রেসওয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত হবে। পদ্মা সেতু এখন নির্মাণাধীন। সেতুর সর্বশেষ রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। আগামী বছরের জুনে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতেও টোল আদায় কাজসহ আনুষঙ্গিক কাজ করবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)। বর্তমানে এ কোম্পানি পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ তদারকি করছে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর টোল হারের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। গত ২৪ জুন সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় তা অনুমোদন করা হয়নি। প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় টোল হারের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে সেতুতে যান চলাচল শুরুর পরই টোল আদায় করা হবে।

টোল হারের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রাইভেটকার ও সাধারণ জিপে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। প্রাডো, নিশান জিপ ও পিকআপে টোল হার ধরা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। মাইক্রোবাসে টোল ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা। ছোট বাসে এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে দুই হাজার টাকা ও বড় বাসে দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। ছোট ট্রাকে (পাঁচ টনের কম) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ থেকে আট টন) দুই হাজার ১০০ টাকা ও  বড় ট্রাকে (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৮০০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। কাভার্ডভ্যানে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা।

এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের জন্য সওজ অধিদফতরের প্রাথমিক টোল প্রস্তাবনায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পুরো ৫৫ কিলোমিটার পথ চলাচলে প্রতি মিনিবাস থেকে ৫৫৫ টাকা টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়, পরে তা কমিয়ে ২৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে টোল ২৭৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বড় বাসের ক্ষেত্রে টোল আগে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৯৯৯ টাকা, তা এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯০ টাকা।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি কিলোমিটার ট্রেইলারের (বড় লরি) জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছিল দুই হাজার ৭৭৫ টাকা। তা কমিয়ে এখন প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার ৩৬১ টাকা। বড় ট্রাকের জন্য টোল দুই হাজার ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার ৮৯ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকের জন্য প্রস্তাবিত টোল এক হাজার ১১০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৪৪ টাকা করা হয়েছে। ছোট ট্রাকের জন্য আগে টোল প্রস্তাব করা হয় ৮৩৩ টাকা, কমিয়ে তা করা হয়েছে ৪০৮ টাকা। মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপের ক্ষেত্রে ৮ টাকা ৭ পয়সা হারে মোট ৪৪৪ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা কমিয়ে করা হয়েছে ২১৮ টাকা। মোটরসাইকেলে ১ টাকা এক পয়সা হারে টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়। এ বাহনে টোল প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৬ টাকা, তা কমিয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে।

পিএসডি/এসএসএইচ