রেড লিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম সরানোর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ব্রিটেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে অনুষ্ঠিত চতুর্থ স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ বৈঠকে এ অনুরোধ জানান তিনি।

লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্রমাগত উন্নতি এবং ভ্যাকসিনেশন হারের কথা বিবেচনা করে অগ্রাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের ওপর বর্তমান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উচ্চ হার বিবেচনায় নিয়ে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ব্রিটেনে ভ্রমণে রেড লিস্টে রয়েছে, সেসব দেশ থেকে ব্রিটিশ নাগরিকরা দেশটিতে ঢুকতে পারলেও থাকতে হচ্ছে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টাইনে।

এদিকে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডামিনিক রাবের সঙ্গে সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও বাংলাদেশকে রেড লিস্ট থেকে সরানোর অনুরোধ করেন। জবাবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত পর্যালোচনা করেন। আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কারণে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশকে রেড লিস্ট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস সফর শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম থাকার পরও বাংলাদেশকে রেড লিস্টে রাখার বিষয়টি ‘বৈষম্যমূলক’।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয়পক্ষ রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মহলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়। বৈঠকে চলমান আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করে উভয়পক্ষ।

এছাড়া, উভয়পক্ষ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষা, বিমান, সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। একইসঙ্গে সুষ্ঠু অভিবাসন এবং গতিশীল অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত সংলাপ শুরু করতে সম্মত হয় দুই দেশ।

লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ফিলিপ বার্টন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন। বৈঠকে ব্রিটেন এ অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীলতা প্রদানকারী হিসেবে ভূমিকা রাখা এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের সমন্বিত বৈদেশিক, বাণিজ্য, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নীতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে বিশেষ স্বীকৃতি দেয়।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাজ্যকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা বিবেচনা করার আহ্বান জানায়।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এবং ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনও সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

এনআই/আরএইচ