অভিযুক্ত খোকন ভুঁইয়া

রাজধানীর ফার্মগেটের ফুট ওভার ব্রিজ থেকে এক নারীকে শ্যামলীর একটি হোটেল নিয়ে যান খোকন ভুঁইয়া। হোটেলের নিবন্ধন খাতায় ইচ্ছাকৃতভাবে ১১ সংখ্যার একটি ভুল ফোন নম্বর দেন খোকন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই হোটেলের কক্ষ থেকে তার সঙ্গে যাওয়া নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়। কিন্তু নম্বর ভুল দেওয়ায় খোকনের তথ্য পাচ্ছিল না পুলিশ।

এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। পরে সেই ভুল নম্বরের সূত্র ধরে খোকনকে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলার এজাহারে নিহতের স্বামী বলেন, স্ত্রীকে (২৫) নিয়ে শেওড়াপাড়ার বর্ডার বাজার এলাকায় থাকেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে তার স্ত্রী ফার্মগেটে আসার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সে দিন রাত ১০টার পর তার স্ত্রীর ফোন বন্ধ পান। এর পর থেকেই তার (স্ত্রীর) কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর শ্যামলীর এক হোটেল থেকে তার স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানতে পারেন। তার স্ত্রীকে হোটেলে নিয়ে শ্বাসরোধ করে খোকন হত্যা করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।

ডিবি তেজগাঁও সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত খোকন এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে দেশে ফিরে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বিয়ার পান করেন। বিয়ার পান শেষে খোকন সেখান থেকে ফার্মগেটে আসেন। ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজে ওই নারীর সঙ্গে তার কথা হয় তার। এক পর্যায়ে ওই নারীকে নিয়ে খোকন শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের ৪/১ নম্বর ভবনে রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে যান। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলটির একটি কক্ষ ভাড়া নেন। পর দিন ওই কক্ষ থেকে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে খোকন জানান, ওই রাতে তিন হাজার টাকার চুক্তিতে তার সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতে সম্মত হন নিহত ওই নারী। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি (নারী)। টাকা না পেলে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টি বলে দেবেন বলেও হুমকি দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে হোটেল থেকে পালিয়ে যান খোকন।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, হোটেলের নিবন্ধন খাতায় খোকনের দেওয়া অসম্পূর্ণ মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই শুরু হয় অনুসন্ধান। মোবাইল ফোনের কল লিস্ট বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্যামলীর একটি আবাসিক হোটেলে নারীকে হত্যার পর পালিয়ে যান খোকন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি। গতকাল (রোববার) গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত খোকনকে। সোমবার তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এমএসি/এসকেডি