অন্যের হয়ে জেল খেটে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সেই মিনু আক্তারের দুই সন্তান ইয়াসিন (১২) ও গোলাপের (৯) পড়ালেখা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চায় ইস্পাত নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। 

মিনুর সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত  দুই সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের কাছে।  

মৃত মিনু আক্তারের দুই সন্তানের মধ্যে ইয়াসিন আছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিশু কিশোর সংশোধনাগারে আর ছোট ছেলে গোলাপ আছে দিনমজুর মামার আশ্রয়ে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, কেএসআরএমের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে একাধিকবার। কেএসআরএমকে আমরা কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দেবো। সে অনুযায়ী সন্তান দুটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে প্রতিষ্ঠানটি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খবরা-খবর রাখবো।

কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, সংবাদমাধ্যমে মিনু আক্তারের দুই সন্তানের অসহায় অবস্থার খবর দেখে কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই আগ্রহের কথা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। মূলত জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কেএসআরএম করণীয় নির্ধারণ করবে। কেএসআরএম চায় হতভাগ্য মিনু আক্তারের অনাথ দুই সন্তান যেন সমাজের নিষ্ঠুরতার বলি না হয়। তারা যেন পৃথিবীর আলো বাতাসে আর দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বড় হতে পারে। পৃথিবী ও জীবনের প্রতি যেন তাদের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি না হয়।

মিনু আক্তারের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ময়নামতি এলাকায় । তিনি সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় থাকতেন। তার স্বামী ২০১৮ সালে মারা যান।     

২০০৬ সালের ২৯ মে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় পারভিন আক্তার নামে এক পোশাককর্মীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পুলিশ তদন্তে পায়, মোবাইল নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশি কুলসুম আক্তার তাকে খুন করেন। ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে পলাতক হয়ে যান। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

পলাতক থাকা অবস্থায় কুলসুম জানতে পারেন, তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তিনি পরিচিত কয়েকজনের মাধ্যমে সদ্যবিধবা হতদরিদ্র মিনু আক্তারকে খুঁজে বের করেন। সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার প্রস্তাবে অসহায় মিনু রাজি হয়ে কুলসুম সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে কুলসুমের পরিচয়ে কারাগারে ছিলেন মিনু। বিষয়টি জানাজানির পর চট্টগ্রাম আদালতের একজন আইনজীবী এ বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট চলতি বছরের ৭ জুন মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন। ১৬ জুন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২৯ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার লিঙ্ক রোডে আরেফিন নগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু।

কেএম/এনএফ