অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ে সম্প্রতি সব ধরনের নথিপত্র তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে তলব করা সব নথিপত্র এখনো দুদকের কাছে পৌঁছায়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ইভ্যালির সিইও রাসেল। এখন তাহলে দুদকের অনুসন্ধানের কী হবে?

সূত্র বলছে, র‌্যাব গ্রেফতার করলেও ইভ্যালি ও এর মালিকদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। দুদক তার সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করবে।

সংস্থাটির একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, আপাতত তারা ইভ্যালির সব নথিপত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। নথিপত্র পেলে অনুসন্ধানের প্রয়োজনে রাসেলসহ অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেক্ষেত্রে রাসেলকে যদি কারাগারে পাঠানো হয় প্রয়োজনে সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর ইভ্যালির নথিপত্র পেতে র‌্যাব বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাইবে দুদক।

জানা গেছে, সর্বশেষ দ্বিতীয় দফায় গ্রাহকের দায়-দেনাসহ ব্যবসার যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে গত ২২ আগস্ট ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় দুদকের অনুসন্ধান টিম।

এর আগে ইভ্যালি ও তার মালিকদের ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইল, অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্ট তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা ও ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র জুলাই মাসে সংগ্রহ করে দুদক। এসব যাচাই-বাছাই শেষে দ্বিতীয় দফায় আরও কিছু নথিপত্র তলব করা হয়েছিল। এসব নথি পাওয়ার পর যাচাই শেষে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা ছিল দুদকের অনুসন্ধান টিমের।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ইভ্যালির অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান টিম। ইভ্যালি নিয়ে অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আর আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান এখনো চলমান। আইন অনুযায়ী অপরাধ পাওয়া গেলে যাকে প্রয়োজন অনুসন্ধান টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

দুদকের সর্বশেষ চিঠিতে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির সব ধরনের লাইসেন্স, ব্যবসায়িক মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য, কতগুলো ক্রয় আদেশের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি, ক্রেতার আদেশের বিপরীতে বকেয়া কীভাবে হলো, ব্যাংকের ঋণসহ সব রকম দায়-দেনার হিসাব, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কত টাকার ভ্যাট, ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন অর্থবছরে কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদন, কোম্পানির সার্বিক খরচের হিসাব ও কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খরচ হওয়া অর্থের উৎস ইত্যাদি।

বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য না দেওয়া কিংবা অন্য পণ্য প্রদান করা, রিফান্ডের অর্থ পেতে দেরি হওয়া, যথাসময়ে গ্রাহকসেবা না পাওয়া ইত্যাদি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পুরনো অভিযোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসাবে নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস না পাওয়ার বিষয়টি।

এখন পর্যন্ত দুদকের কাছে যেসব নথিপত্র পৌঁছেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির ট্যাক্স ফাইল, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের ট্যাক্স ফাইল, সর্বশেষ দুই বছরের অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্টের তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা, ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র ও সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে এমন দশটি মার্চেন্টের তালিকা।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে গঠিত টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।

গত ৮ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এর আগে ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। 

ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

আরএম/আরএইচ