নাবিকসহ নৌযান শ্রমিককে করোনা টিকা দেওয়ার দাবি জিসিবির
নাবিকসহ অভ্যন্তরীণ নৌযানের সব শ্রমিককে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ (জিসিবি)।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় এটিসহ মোট ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে।
বিজ্ঞাপন
জিসিবির দাবিগুলো
১. সমুদ্রগামী জাহাজের প্রায় ১০ হাজার নাবিকসহ অভ্যন্তরীণ নৌযানের শতভাগ শ্রমিককে অবিলম্বে করোনার টিকা দেওয়া।
বিজ্ঞাপন
২. যে কোনো নৌ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অভিজ্ঞ নৌ-স্থপতি, নৌ-প্রকৌশলী, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, মাস্টার মেরিনার, নৌ-পরিবহনবিষয়ক গবেষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জ্যেষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মী ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদফতর, নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন।
৩. প্রত্যেক দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
৪. আধুনিক ও ত্রুটিমুক্ত নৌযান নির্মাণের স্বার্থে নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব নৌ-অধিদফতর থেকে প্রত্যাহার করে একাধিক সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র নকশা অনুমোদন কমিটি গঠন।
৫. নকশা জালিয়াতি বন্ধে ২০১০ সালের ১০ জুলাই থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত কতগুলো নতুন জাহাজের নকশা অনুমোদন ও কিল লেইং-এর অনুমতি দেয়া হয়েছে, নামসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
৬. ত্রুটিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধে যথাযথভাবে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য শূন্য পদগুলোতে অবিলম্বে নিয়োগ দিয়ে নৌ অধিদফতরের শিপ সার্ভেয়ার সংকট নিরসন ও বার্ষিক সার্ভে প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
৭. কোন শিপ সার্ভেয়ার কোন মাসে কতগুলো নৌযান নিবন্ধন ও সার্ভে করছেন, নামসহ সেই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
৮. দক্ষ নৌযানচালক তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিসহ এ ধরনের কারিগরি শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ মাস্টারশিপ-ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা বোর্ড গঠন, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার ও পরীক্ষার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমান নির্ধারণ।
৯. নৌ-অধিদফতর থেকে সমুদ্রগামী নাবিকদের সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি), অভ্যন্তরীণ নৌযানচালকের সনদ নবায়নসহ অন্যান্য সেবা ও নৌযান মালিকদের নিবন্ধন-বার্ষিক ফিটনেস সনদ পেতে অহেতুক কালক্ষেপণ, অর্থ ব্যয় ও হয়রানি বন্ধ।
১০. নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৌ-অধিদফতরকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ, দ্রুতগতির টহলবোটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জলযান ও কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ।
১১. রাজস্ব আদায় ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে বৈধ-অবৈধ সব ধরনের নৌযানের সংখ্যা নির্ধারণে অবিলম্বে জাতীয় নৌ শুমারির ব্যবস্থা গ্রহণ।
১২. নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-অধিদফতরকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান। এ কাজে সহায়তার জন্য নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশকে সম্পৃক্ত করা।
১৩. নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৌ অধিদফতরের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ডুবে থাকা জাহাজের সার্ভের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সিদ্ধান্তে ও নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নৌ অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্তৃক ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ অথবা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সরবরাহ করা।
১৪. নদী খনন ও নৌপথের পলি অপসারণ কাজের গতি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চলমান প্রকল্পগুলোর তথ্য সবিস্তারে বিআইডব্লিউটিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
১৫. বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএসহ সব সরকারি দফতরের নৌযানগুলোকে হালনাগাদ সার্ভের আওতায় আনা ও নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থাগুলো থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সারাদেশে নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন বিপুলসংখ্যক নৌযান চলাচল করছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-অধিদফতরের। কিন্তু অধিদফতরের স্বল্পসংখ্যক পরিদর্শকসহ সীমিত জনবল নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করা আদৌ সম্ভব নয়।
এছাড়া সংস্থাটির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও অপর্যাপ্ত। তবে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক (নৌনিট্রা) এবং বন্দর ও পরিবহন (বওপ) বিভাগের পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও তারা এসব অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না।
নৌপথে বিভিন্ন স্থানে যাতে জেলেরা মাছ ধরার কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখতে না পারেন, সেজন্য কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সে দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করে না বিআইডব্লিউটিএ।
সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবস্থায়ও নানা সমস্যা বিরাজমান। সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে প্রধান চারটি সমস্যায় ভুগছেন নাবিকরা। সেগুলো হলো, করোনার টিকা পেতে বিলম্ব, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে করোনা পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা, নৌ পরিবহন অধিদফতর থেকে সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) পেতে অহেতুক কালক্ষেপণ, অর্থব্যয় ও হয়রানি এবং সরকার কর্তৃক নাবিকদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ সুবিধা সংকুচিত করে রাখা।
এমআই/আরএইচ