রাজধানীতে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।

আগের দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় যানজটের ভোগান্তি তুলনামূলক কম থাকলেও আজ (রোববার) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে। 

আজ সকালে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, খিলক্ষেত, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত আসা তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক রেজাউল করিম বলেন, পুরো রাস্তায় যানজট। অনেক বেশি সময় লেগে গেল মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত আসতেই। এখন প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে। যানজটের জন্য দায়ী প্রাইভেট কার। অতিরিক্ত যানজটে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, ট্রিপ কমে গেছে। এছাড়া যানজট সৃষ্টি হলে অনেক যাত্রী ভাড়ার টাকা ফেরত নিয়ে মাঝ পথে নেমে যাচ্ছে।

রাজধানীর নিউ মার্কেট থেকে শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালী হয়ে গুলশান পর্যন্ত এসে পৌঁছানো দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসের সহযোগী (হেলপার) মনিরুল ইসলামও মনে করেন ইদানিং যে যানজট হচ্ছে তার জন্য দায়ী সড়কে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতি।  

আলিফ পরিবহনের একটি বাসে মিরপুর থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে আসা যাত্রী তোফাজ্জল হোসেনও জানালেন যানজটে নাকাল হওয়ার কথা। তিনি জানালেন পুরোটা রাস্তাতেই বাস ধীরগতিতে চলেছে। 

গতকাল শনিবার ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে  ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২১ : নগর পরিকল্পনায় আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজধানীর যানজটের কারণগুলো তুলে ধরা হয়।

সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে হেল্থ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব প্রকল্প (ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) থেকে বের হয়ে অযান্ত্রিকযান, পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নকে আমরা জিডিপি দিয়ে মূল্যায়ন করছি। যেখানে মানুষের মূল্যায়ন নেই।

সেই আলোচনায় বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়িতে ৭ শতাংশ ট্রিপ হয়। এজন্য সড়কের ৭০ ভাগ জায়গা দখল হয়। অন্যদিকে বাস, রেল, নৌপথ, হাঁটা ও রিকশা এসব মাধ্যমে ৯৩ শতাংশ চলাচল হলেও এ মাধ্যমগুলোর জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। পরিকল্পনায় হাঁটা ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে যানজট, জ্বালানি দূষণ এবং দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে আমরা শহরকে দূষণের শহর, যানজটের শহর আর অনিরাপদ শহরে রূপান্তর করেছি।

এএসএস/এনএফ