দেশীয় গ্যাস কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে প্রিপেইড মিটার বসানোর সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে চার ঘণ্টা সারাদেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার সময় এ সুপারিশ আসে।

সংসদীয় কমিটি মনে করছে, প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য বিদেশি অর্থায়নের প্রয়োজন নেই। দেশের গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নেই এ কাজ করা সম্ভব।

বৈঠক শেষে কমিটির বর্তমান সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ রাখার জন্য সিএনজি স্টেশনগুলোতে রেশনিং করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আমাদের গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে অপচয় রোধ করতে হবে। এজন্য প্রিপেইড মিটার জরুরি। 

তিনি বলেন, আমাদের গ্যাস কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। তাদের যে আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তাতে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রিপেইড মিটার বসাতে পারবে। এজন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তার দরকার নেই। এটা করতে পারলে গ্যাসের সাশ্রয় হবে।

বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে চার ঘণ্টা সারাদেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হয় রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে।

গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কে সম্ভাব্য স্বল্প-চাপ পরিস্থিতি নিরসনে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদার পিক আওয়ারে স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কৈলাশটিলা এমএসটিই প্ল্যান থেকে রশিদপুর কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্টে কনডেনসেটের পরিবর্তে পানি সরবরাহ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয় কমিটিতে। ওই ঘটনা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তাধীন। 

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ওইদিন কনডেনসেট খালাসের সময় সাড়ে ৪ হাজার লিটার কনডেনসেটের পরিবর্তে প্রায় তিন হাজার ৬০০ লিটার পানি পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর তদন্ত শেষে কনডেনসেট বহনকারী লরির চালককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। লরি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। 

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। আজকের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটিকে মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে। 

কমিটির সভাপতি ওয়াশিকা আয়শা বলেন, মন্ত্রণালয়কে আমরা বলেছি, দুদকের কাছ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এনে বিষয়টির সুরাহা করতে। আর যে প্রতিষ্ঠান এই ঘটনায় জড়িত তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও আদায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি দুদকের প্রতিবেদন সংগ্রহ করে সংসদীয় কমিটিকে জানাতে হবে।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তব অগ্রগতি ও আর্থিক অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়। 

এছাড়া বাপেক্সের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন পরবর্তী সভায় উপস্থাপন, পেট্রোবাংলার অধীন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের বকেয়া আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস ব্যবহারকারী প্রতিটি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার সুপারিশ করে কমিটি।

ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মো. আলী আজগার, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, খালেদা খানম, নার্গিস রহমান।

এইউএ/জেডএস