জাতীয় জাদুঘর

করোনায় বন্ধ থাকার পর রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত দেশের জাতীয় জাদুঘর আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট খোলার পর থেকেই প্রাণ ফিরেছে জাদুঘরের, বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। তবে করোনার কারণে বদলে গেছে জাদুঘরের টিকিট কাটার নিয়ম।

আগে যেখানে জাদুঘর গেটে সশরীরে টিকিট কাটার সুযোগ ছিল, সেখানে এখন টিকিট কাটতে হচ্ছে অনলাইনে। শুধু তাই নয়, সেই টিকিটের সংখ্যাও নির্ধারিত। আগে যেখানে দিনে ৩-৪ হাজার মানুষ সেখানে প্রবেশ করত, এখন সেখানে দিনে ৬০০ মানুষ প্রবেশ করতে পারেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে এ নির্দেশনা প্রথম জারি করা হয়েছিল।

নতুন এই নির্দেশনার ভোগান্তিও আছে। গত বছর কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশনা জারি করলেও বিষয়টি এখনো সবার নজরে আসেনি। আর তাই অনেককে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে আরও প্রচারণা চলাতে হবে। কিন্তু যারা আগে থেকেই টিকিট কেটে এসেছেন, তারা অনায়াসে প্রবেশ করতে পারছেন।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, অগ্রিম টিকিট প্রদর্শন করে অনেকেই প্রবেশ করছেন জাদুঘরে। আবার যাদের কাছে অগ্রিম টিকিট নেই, তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

জাদুঘরে প্রবেশ করতে না পারা বিশ্বাস রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে জাদুঘরের গেট থেকে টিকিট কেটেই প্রবেশ করতে পারতাম। আমিও তাই ভেবে এসেছি নাতিদের নিয়ে। কিন্তু এসে দেখি এখানে টিকিট কাটার সুযোগ নেই। টিকিট নাকি এখন অনলাইনে কাটতে হয়, তাও ২/৩ দিন আগে। করোনা অজুহাতে তারা কোনোভাবেই ঢুকতে দিলো না। তাই ফিরে যাচ্ছি।

অগ্রিম টিকিট নিয়ে জাদুঘর পরিদর্শনে আসা নাজমুল হোসেন মুন্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, গেটে ধাক্কাধাক্কি করে টিকিট কাটার চেয়ে অনলাইনে টিকিট কাটাই সহজ মনে হয়েছে। কোনো ঝামেলা নেই। দুই-এক দিন আগে আবেদন করলেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আর পেমেন্ট করা যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।

২০২০ সালে ২২০ দিন বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর খুলেছিল জাতীয় জাদুঘর। করোনার মধ্যে কীভাবে সংক্রমণ রোধ করে জাদুঘর খোলা যায়, সেই চিন্তা থেকেই অনলাইন টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়। তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দিনে দুই শিফটে ৩০০ করে মোট ৬০০ জনকে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে। তাও টিকিট কাটতে হবে অনলাইনে। সেই টিকিট কাটা যাবে জাদুঘরের ওয়েবসাইট থেকেই। আর পেমেন্ট করা যাবে মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংকের কার্ডে।

এদিকে যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেন না তাদের নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারে না, তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাদুঘরের টিকিট অনলাইনে কাটতে হবে আপাতত এটাই নিয়ম। যেহেতু সীমিত পরিসরে একটি খোলা হয়েছে। তাই সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকছে না। অবস্থার উন্নতি হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আরও দর্শনার্থী একসঙ্গে প্রবেশ করতে দিতে পারবো কি-না কিংবা আগের টিকিটিং প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারব কি-না।’

অনলাইনে টিকিট কাটবেন যেভাবে

অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য প্রথমেই যেতে হবে (http://nationalmuseumticket.gov.bd/) এই লিংকে। সেখান থেকে ‘বায় টিকিটি’ ডায়লগ বক্সে যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর ‘পারচেজ ই-টিকিট’ অপশনে ক্লিক করে জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে ‘অ্যাড’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। একের অধিক টিকেট কিনতে ‘অ্যাড মোর টিকিট’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। ‘মেক পেমেন্ট’ বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করে ‘প্রিন্ট টিকিট’ অপশনে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। জাদুঘরে প্রবেশের সময় প্রথম গেট সংলগ্ন ই-টিকিট কাউন্টারে প্রিন্ট কপিটি প্রদর্শন ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।

জাদুঘরের প্রবেশ ফি

জাদুঘরে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা ও অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া জাদুঘর পরিদর্শন করা যাবে শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। আর শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন।

এমএইচএন/ওএফ