শিগগিরই আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে, তবে আগে নির্দেশিকা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘আইপি টিভি’র রেজিস্ট্রেশন প্রদান সংক্রান্ত পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

আইপি টিভিকে নিউ মিডিয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাই নিউ মিডিয়া আরও বিকশিত হোক। পাশাপাশি এটি যেন ভিন্নভাবে ব্যবহৃত না হয়, আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য যাতে সংরক্ষিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম এ মাধ্যমকে যেন জীবন গড়ার কাজে লাগাতে পারে, তারা যাতে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে আরও প্রত্যয়ী হয়, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ এগুলো যাতে আরও বিকশিত হয়, যন্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে মানুষ যেন যন্ত্র হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। সেই লক্ষ্যে আমরা কতগুলো নির্দেশিকা ঠিক করছি এবং এ খাতকে আরও বিকশিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইপি টিভির পাশাপাশি আজকের বৈঠকে ওটিটি প্লাটফর্ম নীতিমালা এবং নিউ মিডিয়ার অন্যান্য মাধ্যমগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি শিগগিরই আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে, তার আগে নির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’

ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় আজকে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটি আইসিটি উপদেষ্টা জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই এসেছে, যেটি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আইপি টিভি রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, ছয় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি এবং অনেকগুলোর বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার আগে একটি নির্দেশিকা অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন শর্তাবলি নির্ধারণ করার লক্ষ্যেই আমাদের আজকের বৈঠক। ’ 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের যুগে এখন বিনোদন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রত্যেকটির মাধ্যমগুলো পরিবর্তন হয়েছে। একসময় যা শুধু ইলেক্ট্রনিক বা প্রচলিত প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন নতুন নতুন মাধ্যম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন ও রেডিও, ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) প্লাটফর্ম, ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও অন ডিমান্ড এ রকম অসংখ্য নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সম্প্রচার মাধ্যম তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই নতুন সম্প্রচার মাধ্যমগুলো দেশে বিকশিত হোক, আমাদের তরুণরা, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিমনা, প্রযুক্তিবিদরা এর উদ্যোক্তা হোক, সেটা আমরা চাই। পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভূতি এগুলো যেন সংরক্ষিত থাকে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আমাদের যে সামাজিক মূল্যবোধ যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে বিকৃত সংস্কৃতি বা বিকৃত বিনোদনে উৎসাহিত না হয়, সে জন্য আইপি টিভি এবং আইপি রেডিওর একটি নির্দেশিকা প্রয়োজন। 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান-উল-আলম ও খাদিজা বেগম, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া, বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: আবদুস সাত্তার সরকার, বিটিআরসি পরিচালক লে. কর্নেল রেজা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুজিনা বেগম, আইন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান গাজী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বৈঠক

এর আগে সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে তার দফতরে বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব মো. আব্দুল মজিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ সভাপতি মুরসালীন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।

বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব নিয়ে কেউ যেন পানি ঘোলা না করতে পারে এবং সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

এসএইচআর/এসকেডি