ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ গ্রিস, আলবেনিয়া এবং মাল্টায় বৈধ পথে কর্মী পাঠাতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই তিনটি দেশের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হলে বিপুল পরিমাণ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

গ্রিসের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য উঠে আসে। জানা গেছে, সমঝোতা স্মারকের খসড়া কপি বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত বার্তা পেলেই কর্মী পাঠাতে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে গ্রিসের বাংলাদেশ দূতাবাস।

এথেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ ‘সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে আলবেনিয়া এবং মাল্টারও দেখভাল করছেন। এই দেশগুলোতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি এই তিনটি দেশে বৈধ উপায়ে কর্মী পাঠাতে চাই। তারা আমাদের দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের এমওইউ ড্রাফট বা খসড়াগুলো আসলে তাদের কাছে পাঠাব, তখন তারা কাউন্টার বার্তা দেবে।

তিনি আরও বলেন, প্রবাসী কল্যাণ থেকে এমওইউ ড্রাফট আসলে আমরা কাজ শুরু করব। তখনই চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হবে। আলোচনা শুরু হলেই চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে।’

বাংলাদেশ থেকে দেশগুলো কোন খাতে এবং কী পরিমাণ কর্মী নিতে চায়- এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দেশগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো। বাংলাদেশিদের তারা ভালো মনে করে। আমরা বৈধ উপায়ে যদি এটা করতে পারি খুব ভালো হবে। ওদের কৃষি, কনস্ট্রাশান, ফিশিং সেক্টরগুলোতে লোক দরকার। আমার মনে হয়, আমাদের অনেক কর্মী এখানে আসতে পারবে। কিন্তু কী পরিমাণ এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা এমওইউ স্বাক্ষরের পর বলা যাবে।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়া চুক্তি যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান আছে। কর্মীদের স্বার্থে ভালো হবে এমন সিদ্ধান্তই নেবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, খসড়া চুক্তি নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরাতো চাই আমাদের কর্মীদের আরও বেশি কর্মসংস্থান হোক। এসব দেশ যদি আমাদের কাছ থেকে কর্মী নিতে চায় কোনো অসুবিধে নেই। এরকম কোনো প্রস্তাব আসলে আমরা যাচাই-বাছাই করব। সেটা যদি আমাদের জন্য ভালো হয়, অবশ্যই সেটা নিয়ে কাজ করব।’

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিনটি দেশে প্রথমবারের মতো কর্মী পাঠাতে এ ধরনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এসব দেশে কর্মী পাঠানোর পর কর্মীরা ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেজন্য খুব হিসেব করেই সামনে এগোবে ঢাকা। কেননা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অবৈধ অভিবাসনের পক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশও চায় না কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ইউরোপোর দেশগুলোতো পাড়ি জমাক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অবৈধ অভিবাসের বিপক্ষে। ইইউ’র বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চাপ আছে। আমরাও এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স। আমরা সব ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’

ইইউভুক্ত দেশগুলোতে দেড় হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এনআই/এমএইচএস