বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে ভারতের রাইটস-আরভির সঙ্গে চুক্তি
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইনের পরামর্শের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ভারতীয় পরামর্শদাতা সংস্থার রাইটস ও আরভি অ্যাসোসিয়েটসের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রেলওয়ের রেল ভবনে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিঞা এবং কনসালটেন্সি সার্ভিসের পক্ষে ভারতের রাইটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জয় আগারওয়াল।
বিজ্ঞাপন
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলসচিব মো. সেলিম রেজা।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর আরও আধুনিকীকরণ এবং অভ্যন্তরে রেল যোগাযোগ উন্নততর করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ভারত সরকারের সহজ শর্তে দেওয়া ঋণচুক্তির আওতায় বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত একটি নতুন সরাসরি রেলসংযোগ স্থাপিত হবে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে এই তহবিল বিতরণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পরামর্শ পরিষেবার মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা এবং সেতু, বাঁধ, রেলপথ, স্টেশন, সিগন্যালিং এবং অন্যান্য সব স্থপনার নকশা অঙ্কন, যাত্রাপথ নির্ধারণ, গাণিতিক মডেলিং, টেন্ডারিং এবং নির্মাণ তত্ত্বাবধান পরিষেবা।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন চূড়ান্ত হয়ে গেলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ প্রধান লাইন এবং লুপ লাইন নির্মাণের পাশাপাশি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম, সেতু, একটি প্রশাসনিক স্থাপনা, বাতি স্থাপন, ওভারহেড সাইন স্ট্রাকচার এবং ট্র্যাক বিছানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মিত হলে রেল যাত্রা ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এটি ৮৬ কিলোমিটার মেইন লাইন এবং ১৬ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মিত হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৭৮ কোটি টাকা। আগামী ১৩ মাসের মধ্যে নিয়োগকৃত কনসালটেন্সি ফার্ম তাদের রিপোর্ট দেবে, এরপর লাইন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করাসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর রাজধানী ঢাকা হয়ে বাংলাদেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল এবং পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত ডুয়ালগেজ সংযোগ স্থাপন হবে। এই নতুন রেলপথ প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমাবে। ফলে ঢাকা থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। এটি নির্বিঘ্নে ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ ট্রেন চলাচল সহজতর করবে এবং দ্রুত ও উচ্চমানের যাত্রী পরিষেবা দেবে।
অনুষ্ঠানে রেল মন্ত্রণালয়, ভারতীয় হাইকমিশন, এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (ঢাকা কার্যালয়), রাইটস (RITES) লিমিটেড এবং আরভি অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেকটস ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসাল্টেশন্স প্রাইভেট লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ পঞ্চাশ বছর উদযাপন হচ্ছে এবছর, যা কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও ছাপিয়ে যায়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার এবং মানুষে-মানুষে সংযোগ সম্প্রসারণের জন্য আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ লাইনটি তৈরি উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি। নতুন এ রেল লাইনের মাধ্যমে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে, সময় কমে যাবে।
বর্তমান সরকার রেল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, পুরোনো লাইন সংস্কারসহ নতুন নতুন লাইন নির্মিত হচ্ছে এবং ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ রেলের উন্নয়নে পাশে থাকবে ভারত। শুধু পরামর্শ নয়, অবকাঠামোগত উন্নয়নেও ভারত পাশে থাকবে।
পিএসডি/এনআই/জেডএস