পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ও সুন্দরবনের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য মেক্সিকোর শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মেক্সিকোর ইবেরো-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর ‘মিটিং দ্যা ইয়াং মাইন্ডস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখার আমন্ত্রণ জানান।

মেক্সিকোর বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক শহরের ইবেরো-আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মতো শিক্ষার্থী এতে যুক্ত ছিল।

প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘অলৌকিক ঘটনা’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৪৭ সালে দেশভাগ, দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে স্বাধীনতার দিকে দীর্ঘ সংগ্রাম; নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করেন।

শাহরিয়ার আলম শিক্ষার্থীদের জানান, গত দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়ন অলৌকিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ধারাবাহিক সমর্থন দেওয়ার জন্য মেক্সিকোর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বব্যাপী শান্তিতে বাংলাদেশের অবদানকে শীর্ষস্থানীয় সৈন্যদানকারী দেশ হিসেবে তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং অভিবাসনের মোকাবিলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলি তার বক্তৃতায় উঠে আসে।

মেক্সিকোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেক্সিকো বাংলাদেশ ভালো বন্ধু। বাংলাদেশ দেশটিকে এ অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে, যার সঙ্গে এটি বহুসংস্কৃতিবাদ, গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অনুরূপ মূল্যবোধ ভাগ করে নেয়।

অনুষ্ঠানে আলোচনার পর প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা, ক্রিপ্টোকারেন্সি, এবং মেক্সিকান খাদ্যসহ দেশটির সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন। বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ, বনায়ন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যারেজ।

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এখনও ক্রিপ্টোকারেন্সির নিয়ন্ত্রণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে কোনো প্রক্রিয়া নেই। অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভিবাসীদের অবদান বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অভিবাসন প্রবাহ ভালোভাবে পরিচালনা করেছে।

অনুষ্ঠানের শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চমৎকার আলোচনার জন্য প্রতিমন্ত্রীকে ‘স্বীকৃতি সনদ’ প্রদান করে। অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এনআই/এসএম