কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ ব্যবসায়ীর
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভাসহ পুরো কোম্পানীগঞ্জ আজ পরিণত হয়েছে নরক পুরিতে। এখানে মানুষের বাক-স্বাধীনতা, সম্মান, ইজ্জত, কোনোটিই নিরাপদ নয়। শুধু আমি নই, এ রকম অসংখ্য ব্যবসায়ীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন পৌর মেয়র কাদের মির্জা। এমন অভিযোগ করেন বসুরহাটে অবস্থিত হুমায়ুন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড সমিলের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আলম মিলন। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রতিকারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি সম্পত্তি ফেরতসহ ক্ষতিপূরণ আদায় ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন এ ব্যবসায়ী।
শনিবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ অনুরোধ ও দাবি জানান ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম মিলন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি নোয়াখালী জেলার বসুরহাট পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পারিবারিক সূত্রে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আমরা বসুরহাট বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়া পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা একাই ভাঙচুর এবং লুটপাট চালান আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফিরোজ অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং মেসার্স হুমায়ন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড সমিলে। বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে বুলডোজার দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানটি গুড়িয়ে দেয়।
এ ব্যবসায়ী বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বসুরহাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। জায়গাটির প্রতি অশুভ নজর পড়ে পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার। তিনি নানাভাবে জায়গাটি দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন বছরের পর বছর। আমার জায়গা দখল করার হীন প্রত্যয়ে একপর্যায়ে বসুরহাট পৌরসভার প্যাডে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিটি সরকারি খাস জমি উল্লেখ করে নোটিশ দেয়। এ নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা আদালতে গেলে আদালত আমাদের দলিলপত্র দেখে এ সম্পত্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। আদালতের স্থগিতাদেশ নং- ২৮। আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকলেও পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
বিজ্ঞাপন
ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মিলন বলেন, সরেজমিনে না দেখলে আপনারা বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে সন্ত্রাসীদের আক্রমণ কতটা ভয়াবহ ছিল। একদিকে বুলডোজার দিয়ে আমার স্থাপনা ভাঙচুর করেছে, অন্যদিকে কারখানায় রক্ষিত কোটি কোটি টাকা মূল্যের ফার্নিচার তৈরি করার ১০টি মেশিন, একটি সমিল, একটি জেনারেটর, ২০টি সিলিং ফ্যান, ১০টি স্ট্যান্ড ফ্যান, সেগুনের সাইজ কাঠ, সেগুন কাঠের রদ্দা, লৌহা কাঠের রদ্দা, ঘামারি গাছের সাইজে কাঠ, ঘামারি গাছের পাল্লাসহ বানানো বিভিন্ন আসবাবপত্র সন্ত্রাসীরা পৌরসভার পিকআপ, ভ্যান, ট্রাক্টরে করে নিয়ে যায়। আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে আসা সন্ত্রাসী পান লিটন, পাটোয়ারী বাড়ির সাহাব উদ্দিন, বীজ গুদামের পলাশ এবং পলাশের ভাই মুসলিম, গরু সবুজ, ধোয়া স্বপন আমার কারখানার আসবাবপত্র নিয়ে বিক্রি করা শুরু করছে বিভিন্ন দোকানে। এ যেন হরি লুটের এক মহা উৎসব।
তিনি বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা আমি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে টেলিফোনে অবগত করি। কিন্তু কেউই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে পারেননি। পরবর্তীতে ঘটনার বিশদ বিবরণ জানিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক নোয়াখালী ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবগত করি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন না। আমি কোম্পানীগঞ্জ থানায় ফোন করার পর কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতের স্থগিতাদেশ কাগজ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরও আবদুল কাদের মির্জা ভাঙচুর, লুটপাট অব্যাহত রেখেছেন।
এমএইচএন/এসএসএইচ