দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং নগরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় হলেও ক্রমেই তা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং চালু হলেও এখন অধিকাংশ মোটরসাইকেলচালক অ্যাপে যাত্রী পরিবহনে অনাগ্রহী। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। ফলে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি ভাড়াতেই মোটরসাইকেলে চড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। আবার যাত্রীর কাছে চালকের পরিচয় ও প্রাথমিক তথ্য না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও রয়েছে।

রাজধানীর শুক্রাবাদ, কলাবাগান, পান্থপথসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মোড়েই মোটরসাইকেল নিয়ে চালকরা যাত্রীর অপেক্ষা করছেন। চালকরা পথচারীদের গন্তব্যের কথা জিজ্ঞেস করছেন। দরদাম মিললেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলছেন। বিশৃঙ্খল অবস্থায় যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানামা করছে।

চালকদের দাবি, অ্যাপ কোম্পানির দেওয়া টাকায় তাদের হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে টাকা কেটে নেওয়ার পর যা থাকে তাতে তেলের টাকাই উঠে না। তাই বাধ্য হয়েই অ্যাপ ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন তারা।

সাইফুল ইসলাম নামের এক চালক বলেন, রাইড শেয়ার করে যা টাকা পাই তার শতকরা ২৫ টাকা কেটে নেয় অ্যাপ কোম্পানি। ১০০ টাকা আয় করলে তাতে জ্বালানি খরচ ৪০ টাকা, নেট ও ফোন খরচ ৫ টাকা, অ্যাপ কমিশন ২০/২৫ টাকা, আবার এক কিলোমিটার দূর থেকে কাস্টমারকে পিক করার খরচ ১০ টাকা। মোট খরচ ৭৫/৮০ টাকা। দেখা যায়, চালককে ২০ টাকা নিয়ে খুশি থাকতে হয়। তাই এখন অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারের আগ্রহ নেই।

আরেক চালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় যাত্রীরা নির্দিষ্ট লোকেশনে না থকে অন্য জায়গার দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের পিক করতে তীব্র যানজট ও ইউলুপ ঘুরে যেতে হয়। যা অ্যাপ কাউন্ট করতে পারে না। ফলে আমাদের অতিরিক্ত তেল খরচ হয়। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের টাকা পাওয়া যায় না।

যাত্রীরাও বলছেন, রাইড শেয়ারিং আশীর্বাদ হলেও সমন্বয়হীনতার কারণে এখন ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রিপ শুরুর আগে এক রকম ভাড়া এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তারচেয়ে বেশি ভাড়ায় নাজেহাল যাত্রীরা। আবার অনেক চালক ট্রিপ শুরুর পর তা চালু না করে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ইচ্ছেমতো ভাড়াও আদায়ের মাধ্যমে যাত্রীদের হয়রানি করেন।

সম্প্রতি সাবিত বিন মুক্তার নামের এক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, পান্থপথ থেকে উবার রাইড নিয়ে মিরপুর যাওয়ার সময় চালক ইচ্ছে করেই ট্রিপ স্টার্ট করেনি যা আমি নামার পর বুঝতে পারি। তাড়াহুড়ার কারণে আমিও খেয়াল করিনি যে তিনি ট্রিপ স্টার্ট করেছেন কি-না। নেমে বিকাশে পেমেন্ট বলতেই হাসি দিয়ে চালক জানালেন তিনি ট্রিপই স্টার্ট করেনি। এরপর আমি তাকে দিয়ে বাধ্য হয়েই ট্রিপ ক্যান্সেল করিয়ে ১৫০ টাকা দিয়েছি। যেহেতু তার রেকর্ড অ্যাপে নেই তাই উবারেও অভিযোগ জানাতে পারিনি।

নিয়াজ মোরশেদ নামের এক যাত্রী বলেন, অ্যাপের চেয়ে দরদাম করে ফিক্সড করে যাওয়াই ভালো। একদিন অ্যাপে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভাড়া দেখেছি ৭২৫ টাকা কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছে দেখি এক হাজার ৭৯৫ টাকা। এরপর থেকে আর অ্যাপে যাই না বরং দরদাম করেই যাই।

এরই মধ্যে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর অ্যাপের কমিশন শতকরা ১০ শতাংশ করা, পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করেছে অ্যাপভিত্তিক ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মবিরতি পালন ও মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, অ্যাপনির্ভর রাইড শেয়ার পরিষেবা দিনদিন ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ ধারণ করছে। কিন্তু রাইড শেয়ারিং পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো চালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম কমিশন কেটে নিচ্ছে। এতে করে সারাদিন রাইড শেয়ারিং করার পর তাদের তেমন কিছুই থাকে না।

এমন অবস্থায় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনেকেই চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করছে। রাইড শেয়ারিং নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের সিইও হুসাইন এম ইলিয়াস ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন যাত্রী যখন ভাড়া বা চুক্তিতে যাতায়াত করছে তখন তার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আর অ্যাপের মাধ্যমে চলাচল করলে উভয়ের তথ্যই অ্যাপে থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।

অ্যাপে যাত্রী নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এমন ঘটনা খুবই কম। তারপরও যদি আমরা যাত্রীদের অভিযোগ পাই তবে, সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

চুক্তি ও ভাড়াভিত্তিক রাইড শেয়ার বন্ধে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়কে রাইড শেয়ারিং নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

আরএইচ/ওএফ