জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য উঠছে ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্প। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) প্রকল্পটি সভায় উপস্থাপন করা হবে। 

২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও গত ১০ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু একনেক সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে সেটি ফেরত পাঠান। একইসঙ্গে দেরি হওয়ার কারণসহ প্রকল্পের সার্বিক দিক দ্রুত তদন্ত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময়ের একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রকল্পটির কাজের গতি সন্তোষজনক নয়। অত্যন্ত অসন্তুষ্টি এবং বিরক্তি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণযোগ্য নয়। এমন প্রকল্প আমরা নেব না। আইএমইডির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে হবে। আদ্যোপান্ত, আর্থিক-বৈষয়িক ও ম্যাটেরিয়াল সব বিষয় দেখতে হবে। দরকার হলে যে কোন সংস্থার সহায়তা নিতে পারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।’

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বাড়িয়ে ৬১১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (তিন বছর বৃদ্ধি) মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়। প্রস্তাবটি ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন পায়। দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, ২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১২ হাজার ৫১৮ দশমিক ৭৬৬ বর্গমিটার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, দুই হাজার ৪৭০ দশমিক ১৭৮ বর্গমিটার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, এক হাজার পাঁচ দশমিক ২৯৫ বর্গমিটার হোস্টেল ভবন (পুরুষ) ও এক হাজার পাঁচ দশমিক ২৯৫ বর্গমিটার হোস্টেল ভবন (নারী) নির্মাণ, ৩৯৮ দশমিক ৫৫ বর্গমিটার ইন্টার্ন ডাক্তার ডরমিটরি (পুরুষ) ও ৩৯৮ দশমিক ৫৫ বর্গমিটার ইন্টার্ন ডাক্তার ডরমিটরি (মহিলা) নির্মাণ এবং পাঁচটি যানবাহন, আসবাবপত্র, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ইত্যাদি।

প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, নতুন ভৌত কাজ সংযোজন (আনসার ও ড্রাইভার ব্যারাক-কাম-গ্যারেজ, সাবস্টেশন ভবন, ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদি সন্নিবেশ করে বহুবিধ ব্যবহার উপযোগী ভবন নির্মাণ, জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন), জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস এবং মাস্টার প্লান সংশোধন, নতুন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র অন্তর্ভুক্তির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তনের কারণে নতুন কোড সংযোজন এবং সুষ্ঠুভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার জন্য মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কুষ্টিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী জেলার জনগণ আধুনিক চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবেন। এছাড়া উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধার উপযোগী পরিকাঠামো তৈরিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। এজন্য এ প্রকল্প দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য একনেক সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এসআর/আরএইচ