আকাশে ঝলমলে রোদ। সেই রোদের মধ্যেই কিছুক্ষণ ঝুম বৃষ্টি। কয়েক মিনিট পরই থেমে যায়। এরপর আবার হেসে ওঠে রোদ। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে এভাবেই চলে রোদ-বৃষ্টির খেলা।

রোদ-বৃষ্টির এমন খেলার জন্য মালদ্বীভিয়ান ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের অন্যতম অনুষঙ্গ ছাতা। তরুণরা ছাতার পরিবর্তে ক্যাপ পড়েন। পর্যটকরাও এমন বৃষ্টির জন্য ছাতা সঙ্গে নিয়ে বের হন। বাংলাদেশের মতো সেখানে দিনভর বৃষ্টি খুব কমই হয়। তবে প্রায় প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য হলেও বৃষ্টি হয়।  
 
মালেতে এক দশকের বেশি সময় কাটানো বাংলাদেশের প্রবাসী হারুনুর রশিদ সেখানকার ঝড়-বৃষ্টি সম্পর্কে বলেন, ‘এখানে নিয়মিত বৃষ্টি হয়। তবে, স্বল্প সময়ের জন্য। দিনভর বৃষ্টি খুব কমই হয়। বছরে দু-এক দিনের বেশি নয়। বাংলাদেশের মতো ঝড় গত ১০ বছরেও দেখিনি।’

সমুদ্রবেষ্টিত দেশ হওয়ায় মালদ্বীপে গরমের তীব্রতা একটু বেশি। বছরের অধিকাংশ সময় ৩০ ডিগ্রির আশেপাশে থাকে তাপমাত্রা। মালদ্বীভিয়ান ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩৩ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা সাধারণত ওঠে না। গরম থাকলেও আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় শরীর বেশি ঘামে না।

ট্যুরিস্টরা পায়ে হেঁটেই ছোট্ট এই শহর উপভোগ করেন। অনেকে আবার স্কুটি ভাড়া নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। ট্যাক্সি থাকলেও পায়ে হাঁটা ও স্কুটির ব্যবহারই বেশি। ট্র্যাক্সিতে উঠলে ভাড়া গুনতে হয় ২৫ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩০ টাকা )।

মালদ্বীপের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সারা বছর একই আবহাওয়া থাকে। শীতকাল নেই, বর্ষাও সেই অর্থে নেই। সারা বছরই গরম আবহাওয়া। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র শীতহীন দেশও বলা যায় মালদ্বীপকে।

খানিকটা গরম আবহাওয়া মালদ্বীপকে ইউরোপের নাগরিকদের কাছে আরও আকৃষ্ট করে বলে মনে করেন মালদ্বীপের নাগরিক আহমেদ জামিল। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে অনেক শীত। এখানে শীত নেই। গরম থাকলেও মাত্রা অসহনীয় নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানকার সহনশীল আবহাওয়া পর্যটকদের টানে বেশি’।

জামিলের বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটা একমত স্থানীয় এক রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত স্প্যানিশ নাগরিক ডেভিড জিগ্যান। বলেন, ‘আমি আগে দুবাইতে কাজ করেছি। সেখানে অসহ্য গরম। মালেতে সারা বছর গরম থাকলেও আমাদের মতো ইউরোপীয়ানদের জন্য তা সহনীয়। এখন ইউরোপের অনেক দেশেই গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যায়। মালেতে অধিকাংশ সময় ২৫-২৮ থাকে, যা সবার জন্যই সহনীয়’।

শীত না থাকায় এ দেশে শীতের পোশাক বেচাকেনা নেই বললেই চলে। আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ দেশে মানুষের পোশাকে রয়েছে বৈচিত্র্য। বছরের সব সময় গরম থাকায় পুরুষরা টি-শার্টই বেশি পরেন। মুসলিম দেশ হওয়ায় নারীরা হিজাবসহ সালোয়ার কামিজ পরেন। জুতোর পাশাপাশি স্যান্ডেল ও কেডসেরও কদর রয়েছে এখানে।

এজেড/আরএইচ