সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের দুই কর্মকর্তাকে শ্রমিক অসন্তোষের ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগে জড়ানোর দায়ে অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। 

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি সাব কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার পর এ সুপারিশ করা হয়।

এর আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক শেখ আসাদুজ্জামান এবং জাকির হোসেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংসদ সদস্য শাজাহান খানের সংসদ হোস্টেলের কার্যালয়ে গিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য কাজ করছেন এমন প্রতিবেদন দিয়েছিলেন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

জানা গেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান তাকে জড়িয়ে সরকারি দফতরে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করেন। পরে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনঃতদন্তের জন্য বেগম শামসুন নাহারকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যের সাব কমিটি গঠন করা হয়। আজকের বৈঠকে ওই সাব কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেখ আসাদুজ্জামান এবং জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে তার পুরোটাই মিথ্যা। ঘটনার দিনে তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য শাজাহান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলীও সাব কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন দুইজন কর্মকর্তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমানের ভিত্তিতে তাদের জড়িত থাকার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণাদি দাখিল করতে পারেননি বলে সাব-কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। ঘটনার জন্য মো. ইউসুফ আলী সাব কমিটির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই কর্মকর্তার তদন্ত রিপোর্টকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হক দুঃখজনক বলে সাব-কমিটির কাছে জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে দুই কর্মকর্তাদের অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে ভুল ও মিথ্যা তদন্তের জন্য উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সাব কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুইজন অফিসারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। আমরা ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহার করতে বলেছি। আর মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার কারণে মো. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. শাজাহান খানের নামে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।

বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জনবল বৃদ্ধি এবং শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ, গাজীপুরে সরকারের খাস জমিতে শ্রমিকদের আবাসন তৈরিতে উপযুক্ত খাসজমি না পাওয়া গেলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জমি কিনে আবাসন তৈরির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া চা মালিক প্রতিনিধি এবং চা শ্রমিক প্রতিনিধিকে পরবর্তী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সভাপতি মো. মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শাজাহান খান, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মানু মজুমদার, শামসুন নাহার এবং মো. আনোয়ার হোসেন (হেলাল) অংশগ্রহণ করেন।

এইউএ/এসকেডি