ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মামলায় তার বিরুদ্ধে ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার সম্পদ বেনামে অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মামলায় রাজউকের কোনো কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়নি। 

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।  

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। 

রাজউকের কোনো কর্মকর্তাকে কেন আসামি করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের আসামি করা হবে।

সূত্র জানা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার নিজ নামে ইতোপূর্বে রাজউক থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট বরাদ্ধ প্রাপ্ত হন। পরে তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন করান এবং ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্ধ করান। পরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই তিন কাঠার প্লটটি পাঁচ কাঠার প্লটে উন্নীত করান।

পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার সেক্টর-৪, রোড নং-৬, বাড়ি নং-১/এ প্লটটি রাজউক থেকে অনুমোদন করান। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই ওই প্লটের যাবতীয় অর্থ মোট ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে ওই প্লটে ৯তলা ভবন নির্মাণ করেন।

সূত্রে আরও জানা যায়, অনুসন্ধানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন অনুযায়ী উত্তরা আবাসিক এলাকায় সেক্টর-৪ এর বাড়িটির নির্মাণব্যয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। এছাড়া ওই প্লটের মূল্য হিসেবে রাজউকে পরিশোধ করা হয় ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্লটের মূল্যসহ ভবন নিমার্ণ ব্যয় দাঁড়ায় ৭ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। এর মধ্যে খালেদা চৌধুরীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম বাবদ ৭০ লাখ টাকা টাকা পান। ওই টাকা বাদে অবশিষ্ট ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা ও সিনহার পরিচিত শংখজিত সিংহের নামে স্থায়ী ও নগদে ৭৮ লাখ টাকা জমা করেন। 

অর্থাৎ ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকার সম্পদ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে নিজ ভাই এবং আত্মীয়ের নামে-বেনামে অর্জন করেছেন। যার কোনো বৈধ উৎস নেই বা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। 

ওই টাকা বৈধ করতে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

আরএম/জেডএস/এসএম