চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের টানেল নির্মাণ এলাকায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। 
 
তিনি বলেন, আজ দুপুর ১২টায় টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হয়েছে। এখন স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হবে। এছাড়া টানেলের পরামর্শকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ টানেলের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  

২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হলে কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা অংশে অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রামে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইকোনমিক জোন গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ টানেল দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা আর চীন সরকারের ঋণ পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। 

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ‘টানেল বোরিং’ কাজের উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণাধীন এ টানেলের চট্টগ্রাম নগরীর প্রান্তের কাজ শুরু পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ থেকে। এটি কাফকো ও সিইউএফএল সীমানার মাঝখান দিয়ে উঠে কর্ণফুলী-আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ করবে। 

টানেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ও ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে নদীর দুই প্রান্তে মোট পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযুক্ত সড়ক থাকবে। এছাড়াও ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার আছে আনোয়ারা অংশে। 

টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, নগরীর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া প্রথম টিউবের কাজ গত বছরের ২ আগস্ট শেষ হয়। নদীর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় টিউবটির কাজ আজকে দুপুর ১২টায় শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা অংশের সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা অংশে ওভারব্রিজের কাজও এগিয়ে চলছে। সব মিলিয়ে টানেলের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল নির্মাণের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) ও চীন সরকারের (দ্য এক্সিম ব্যাংক অব চায়না) মধ্যে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঋণচুক্তি সই হয়। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ চুক্তি কার্যকর হয়। আর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়। 

কেএম/আরএইচ