রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ/ ছবি : সংগৃহীত

গত দুই বছর ধরে ‘গোয়িং হোম ক্যাম্পেইন’ লেখা ব্যানারটি মুহিবুল্লাহর অফিসে ঝুলছিল। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না তার। নানামুখী উদ্যোগের কারণে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল তার সুনাম। দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলি মুহিবুল্লাহর প্রাণ নিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার খ্যাতিতে আঁচ লাগাতে পারেনি এতটুকু। তার মৃত্যুর পর প্রতিবাদে সরব হয়েছে পুরো বিশ্ব। হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন বিশ্বের বড় বড় দেশের কূটনীতিকরা।

এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে অসংখ্য প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বৃত্তদের গুলিতে ‘গোয়িং হোম ক্যাম্পেইন’ লেখা মুহিবুল্লাহর সেই ব্যানারে যেমন ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পড়েছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরানোর স্বপ্নও এ মৃত্যুর কারণে ফিকে হতে পারে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দরকার ছিল মেধাবী নেতৃত্ব। মুহিবুল্লাহ ছিলেন তেমনই একজন মেধাবী ও দূরদর্শী নেতা। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বশূন্য করা হয়েছে। তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ অনেকটাই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় মুহিবুল্লাহকে খুনের নেপথ্যে তিনটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমত, যারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় রাজি নয় তারা মুহিবুল্লাহর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। সুতরাং অসন্তোষ থেকে তারা খুন করতে পারে মুহিবুল্লাহকে। স্পষ্ট করে বললে এই হত্যায় মিয়ানমার জান্তা সরকারের হাত থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও মুহিবুল্লাহই একমাত্র ব্যক্তি যার যোগাযোগ ও যাতায়াত ছিল বিশ্ব দরবারে। মুহিবুল্লাহর মতো নেতাকে সরিয়ে রোহিঙ্গাদের ঐক্যে ফাটল ধরানো এবং তাদের নেতৃত্ব শূন্য করার কূটচালের অংশ হতে পারে এ হত্যাকাণ্ড।

তৃতীয়ত,  আল ইয়াকিন বা আরসার নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বলি হতে পারেন মুহিবুল্লাহ।

এসব যুক্তির সঙ্গে একমত রোহিঙ্গা নেতারাও। তাদের দাবি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) যা এখন আল ইয়াকিন নামে পরিচিত, কক্সবাজারবাসীর কাছে তাদের পরিচয় ‘জঙ্গি বাহিনী’। তাদের হাতে কিংবা মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট কেউ এই হত্যায় জড়িত। মুহিবুল্লাহর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে ফেরার স্বপ্নে ছেদ পড়েছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা নেতারা। নিহত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছে আরসা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে মুহিবুল্লাহকে। দেশের বাইরের পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে। কে বা কারা এই হত্যায় ইন্ধন দিয়েছে সেটি স্পষ্ট না হলেও তা বিবেচনায় তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ১-ইস্ট নম্বর লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে রাত সোয়া ১০টার দিকে মুহিবুল্লাহ মারা যান।

৪০ বছর বয়সী এ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ নামে পরিচিত ছিলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায়ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

যেভাবে হত্যা করা হয় মুহিবুল্লাহকে

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাঈম-উল হক জানান, ওই রাতে ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকের এক দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মুহিবুল্লাহ। এক পর্যায়ে মুখে গামছা পরা একদল অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে পরপর পাঁচটি গুলি ছোড়ে। তার শরীরে তিনটি গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না স্বজনদের

নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর ভাতিজা মাস্টার আব্দুর রহিমও প্রত্যাবাসন নিয়ে সক্রিয়। তবে চাচার খুনে বিচলিত আব্দুর রহিম এখন পালিয়ে আছেন, চাইছেন নিরাপত্তা।

মুহিবুল্লাহর সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচআর) সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, নিজ ভূমিতে ফেরার স্বপ্ন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের যে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন সেই মুহিবুল্লাহ চাচার স্থায়ী ঠিকানা হলো এই শিবিরে। তিনি আর ফিরবেন না মংডুতে। অথচ সকল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার কাছে মুহিবুল্লাহ ছিলেন বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর এক মানুষ। তাই এখন ভয় হয়। শঙ্কা জাগে, আদৌ ফিরতে পারব কি না।

তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। আরসার লোকজন আমাদেরও হুমকি দিচ্ছে। চাচার মৃত্যুর পর শিবিরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আর কী বলার আছে। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আপাতত রিলোকেশন চাচ্ছি, অন্য কোথাও যদি নিরাপত্তা মেলে। সে দাবিই এখন বাংলাদেশ সরকারের কাছে।’

নিরাপদ ও বিকল্প আশ্রয়ের খোঁজে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (আরনো) নামে একটি সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর চরম আতঙ্কে রয়েছেন বলে বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়েছেন। এমন পরিণতির আগে অনেকেই ‘অ্যাসাইলাম’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারী নেত্রী জামালিদা গণমাধ্যমকে জানান, মুহিবুল্লাহর মতো তিনিও প্রত্যাবাসন নিয়ে সক্রিয় ছিলেন। হামলাকারীরা প্রত্যাবাসন চায় না। যারাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সক্রিয় তারাই এখন হামলাকারীদের টার্গেট। এজন্য তিনিও এখন আতঙ্কিত।

মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইয়ের দেশে ফেরার স্বপ্নই কাল হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একটা অংশ দেশে ফিরতে চায় না। হামলাকারীদের সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর যোগাযোগ থাকার দাবিও করেছেন তিনি।

তিন কারণে খুন হতে পারেন মুহিবুল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মুহিবুল্লাহর মৃত্যুর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ঘটতে পারে। এটাই প্রথম কোনো রোহিঙ্গা নেতা খুনের ঘটনা নয়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও রোহিঙ্গা নেতা খুন হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও যাতায়াতে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন মুহিবুল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ খুনে মিয়ানমার মিলিটারির হাত থাকতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হোক সেটা মিয়ানমার কখনো চায়নি। আমরা কোনো নেতার নাম জানি না। মিয়ানমারে যখন তারা ছিলেন তাদের নাম জানতাম না। এখনো যে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবস্থান করছে তাদের নেতা কে? সেটা কিন্তু আমরা জানি না। যে দুই চারজনের নাম শোনা যায়, তারা কেউ মিয়ানমারে বা বাংলাদেশে অবস্থান করছে না। ইউকে বা ইউএসএসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। এই ক্ষেত্রে একটা প্যাটার্ন আমরা দেখতে পাচ্ছি যদিও তা তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষ, তা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হোক তা কখনো অ্যালাও করেনি মিয়ানমার।’

রোহিঙ্গারা বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও মুহিবুল্লাহই একমাত্র ব্যক্তি যার যোগাযোগ ও যাতায়াত ছিল বিশ্ব দরবারে। মুহিবুল্লাহর মতো নেতাকে সরিয়ে রোহিঙ্গাদের ঐক্যে ফাটল ধরানো ও নেতৃত্ব শূন্য করার কূটচালের অংশ এ হত্যাকাণ্ড।

‘দ্বিতীয়ত, এ ক্ষেত্রে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মুহিবুল্লাহ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে থেকে বেশ জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাছাড়া মুহিবুল্লাহ নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত তৈরি করছিলেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সমর্থনও পাচ্ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তাই আরও বড় নেতা হয়ে ওঠার আগেই মুহিবুল্লাহকে সরিয়ে দিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।’

‘তৃতীয়ত, নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে থাকতে পারে দ্বন্দ্ব। কারণ যারা মুহিবুল্লাহকে খুন করেছে তারা খুব কাছে গিয়েছিল। কাছ থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হইচই হয়নি। কেউ বাধাও দেয়নি। হয়তো খুনিদের চিনতেন মুহিবুল্লাহ। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যেই অনেকে ফেরার পক্ষে ছিলেন না। তাদের সঙ্গে মিয়ানমার মিলিটারির যোগাযোগও থাকতে পারে। এই তিন কারণ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেনও এই তিন কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে তার জোর ধারণা এই খুনের সঙ্গে আল ইয়াকিন (আরসা) জড়িত থাকতে পারে। কারণ আল ইয়াকিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিয়ানমার জান্তা সরকারের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ খুনের পরপরই আল ইয়াকিন বা আরসার কথা উঠে এসেছে।’ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল ইয়াকিন যে জড়িত থাকতে পারে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যে দিন (১৭ আগস্ট) আরাকানে হত্যাযজ্ঞ শুরু হলো তখন আরসা আগের দিন অনেকগুলো ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছিল। এরপর আমরা আরসার নাম শুনিনি। কিন্তু যখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসা শুরু করল তখন কিন্তু আরসা সহযোগিতা করেনি। তবে এর তিন সপ্তাহ আগে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সৈন্যদের আনা হয়। তারা কীভাবে জেনেছিল যে ঠিক এই সময়ে আরসা সেখানে হামলা চালাবে? অর্থাৎ যেভাবেই হোক জেনে না জেনে আরসা মিয়ানমার মিলিটারির পক্ষে কাজ করছিল। কারণ প্রত্যেক বিপক্ষ বাহিনীতে সরকারের এজেন্ট থাকে। এটা আমার অনুমান যে আরসাতেও মিয়ানমার মিলিটারির লোকজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন মুহিবুল্লাহ। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায়ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

‘প্রত্যাবাসন কখনো চায়নি মিয়ানমার। কিন্তু মুহিবুল্লাহ প্রত্যাবাসনের পক্ষে। সেজন্য তাকে সরিয়ে দেওয়া অনেকে দরকার মনে করেছিল।’ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টিও থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, মুহিবুল্লাহকে বাংলাদেশ সরকারের স্পন্সর করা উচিত ছিল। তাকে লাইনে রাখা উচিত ছিল। যাতে মুহিবুল্লাহ বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে পারেন।’

মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মুহিবুল্লাহর মৃত্যুতে কিন্তু নেতৃত্ব শূন্য থাকবে না। কেউ না কেউ তা দখল করবে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় ক্রিমিনাল নেতৃত্বই গড়ে উঠবে, তাতে বাংলাদেশের লাভ হবে না। স্থানীয় ক্রিমিনালরা এ ক্ষেত্রে সহযোগী হয়ে উঠতে পারে। এসব বিষয় ভাবনায় আনা উচিত।’

মুহিবুল্লাহ হত্যায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার ৫

উখিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা করেন নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। ১ অক্টোবর দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৬ থেকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে মোহম্মদ সলিম নামে একজনকে আটক করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। পরে তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর আরও চারজনকে আটক করে একই থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার

জানতে চাইলে এপিবিএন-১৪ এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর তার পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এপিবিএনের সদস্য সংখ্যা চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া ও এর আশপাশের ক্যাম্পে যেখানে আগে ৭০-৭৫ জন এপিবিএনের সদস্য দায়িত্ব পালন করতেন; এখন তা বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরও জোরদারের পাশাপাশি ক্যাম্পে নিয়মিত ব্লক রেইড দেওয়া হচ্ছে।

হত্যাকারীরা ক্যাম্পেই অবস্থান করছে মর্মে ধারণা পোষণ করে তিনি বলেন, মুহিবুল্লাহর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

মুহিবুল্লাহ হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা ও বিচার সম্পন্নের দাবি জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। অন্যদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও।

জেইউ/এসকেডি