সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে যা যা করণীয় সব করা হবে
কোনো সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হলে সেটি বন্ধের জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
রোববার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নিয়োগে আইনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা আছে। অচিরেই বিচারপতি নিয়োগে আইন হবে। ষোড়শ সংশোধনীর মামলাটি রিভিউ পর্যায়ে আপিল বিভাগে রয়েছে। আমরা রিভিউ শুনানির জন্য দ্রুত আবেদন করবো।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত ও বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ফৌজদারিতে তদন্তের ভার পুলিশের হাতে। তাই তদন্ত রিপোর্ট না পড়া পর্যন্ত পুলিশ বা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপের বিষয় আসছে না। তবে আপনারা যেহেতু বলেছেন, সেহেতু এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করবো।
বিজ্ঞাপন
সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হয়তবা সার্চ কমিটি গেজেট, এটা আইন নয়। যেহেতু সবার কনসেনসাসের (একটি সাধারণভাবে গৃহীত মতামত) ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি এটা করেছেন, এটা আইনের কাছাকাছি। কারণ এটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন একটা কথা উঠেছে, কনসেনসাসের ব্যাপারে, যারা কনসেনসাসের পক্ষ ছিলেন তারাও যখন এখন বলছেন, সেজন্য আমি বলছি যে, এখন আইনটা করা প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতির কারণে এবার আইনটি পাস করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কোভিড সিচুয়েশন ইমপ্রুভ করলে আমরা পুরো সংসদে সাড়ে তিনশ সদস্য বসতে পারব, বসে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে পারব। সেই জিনিসটা কিন্তু আমাদের হচ্ছে না। সে কারণে আমি বলেছি, ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। এবার সার্চ কমিটি করবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে তদন্ত কমিশন গঠনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের এই প্রধান কৌঁসুলি বলেন, তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেয়। এই সময়ে কমিশন নিয়ে ব্যস্ত থেকে কোভিড মোকাবিলা না করলে সেটা বোধ হয় বিবেচকের কাজ হতো না।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ করা শুরু করেছি। এটার অবকাঠামো কী হবে, এটা কোন আইনের আওতায় থাকবে বা নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হবে কি-না, এটা পরিধি কেমন হবে-এগুলোর খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
তদন্তের আওতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন যেটা প্রয়োজন, যারা এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিলেন, তারা অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। শুধু হত্যার অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িত না। তারা হচ্ছে এই ঘটনার পরে বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তন বা বিকৃত করার অপরাধ করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, তারা এই অপরাধটার যাতে বিচার না হয়, সেই আইন করার অপরাধ তারা করেছেন। এজন্য অবশ্যই নতুন প্রজন্ম এবং এখনকার প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানানো প্রয়োজন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যেটা প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, এই কমিশন কিন্তু কোনো প্রতিহিংসামূলক নয়। এই কমিশন হচ্ছে যে, বিকৃত ইতিহাসকে ফেলে দিয়ে সত্য যে ইতিহাস সেটাকে সঠিক পথে চালিত করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেটা সম্পর্কে জানানো।
তিনি বলেন, এটার পরিধিগত ব্যাপার আছে, গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের নিয়ে এটা করা উচিত। সেসব কারণে এটার অবকাঠামোগত আলাপ-আলোচনা সেটার কাজ চলছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যাতে ‘অপব্যবহার ও দুর্ব্যবহার’ না হয়, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক হয়রানির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে কোনো সাংবাদিককে যাতে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা না হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়রানি করতে চাইলে তার বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ সেলের সুপারিশ নেওয়ার পদক্ষেপটি জোরদার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন আইনমন্ত্রী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিচারাধীন বিষয় বলে এড়িয়ে যান আইনমন্ত্রী।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে মিট দ্য প্রেস সঞ্চালনা করেন সাধারণ সস্পাদক মসিউর রহমান খান।
এইউএ/এসএম