এনু-রূপন ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত নয়, দাবি চাচার
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূঁইয়া স্টিল সিট আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী। তারা ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাদের চাচা আমিনুল হক ভূঁইয়া। তাই সরকারের কাছে এ দুই ব্যবসায়ীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন আমিনুল হক ভূঁইয়া। এ সময় এনু ও রূপনের শিক্ষক মুন্তাজুল হক মানোয়ারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমার দুই ভাতিজা স্টিল-সিট আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী। গত ৮ বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স দিয়েছেন তারা। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি সাজানো মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ক্যাসিনোকাণ্ডে তাদের নাম জড়িয়ে ব্যাপক অপপ্রচার করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যবসা বন্ধের ফলে সরকার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার দুই ভাতিজা স্টিল-সিট আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়ার মুক্তি চাই। এই দুই ব্যবসায়ী ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়। প্রকৃত সত্য হলো ওই ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে এনু ও রূপনের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ২০১৮-২০১৯ কমিটিতে দুই ভাইয়ের কেউ ছিলেন না। ক্লাব কমিটির সদস্য না হয়ে কেউ কীভাবে ক্লাবের ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বড় মাপের ব্যবসায়ী হয়ে কেন তারা ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত হবেন? আমার দুই ভাতিজা বড় মাপের ব্যবসায়ী, এটা কোনো দাবি নয়। দুইজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এনু-রূপন স্টিল হাউজ দেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে প্রায় ৫১৮ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। পণ্য আমদানির সময় সোনালী ব্যাংক কাস্টম হাউজ শাখায় ২০০ কোটি টাকা ট্যাক্স (ডিউটি সিডি ভ্যাট এ আইটি ৩৫ শতাংশ হারে) প্রদান করেছেন। এছাড়া ৩ শতাংশ হারে এআইটি প্রদান করেছে ৩ কোটি টাকার বেশি। ডাচ বাংলা ব্যাংক নয়াবাজার শাখায় প্রতিটি এলসির সময় এলটি প্রদান করতেন তারা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি আমার দুই ভাতিজা এনু-রূপনকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে ১১টি সাজানো মামলা দায়ের করে, যা ভিত্তিহীন। তাদের গ্রেফতারের পর ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে সিন্দুকের ভেতর থেকে ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬০০ টাকা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর, সঞ্চয়পত্র এবং ১২৩০ গ্রাম স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়েছিল। এসব অর্থ-সম্পদ সবই বৈধ।
নিজ বাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা রাখা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হলো এনু ও রূপনকে গ্রেফতারের পর তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। এর ফলে বাধ্য হয়ে স্টিল বিক্রির টাকা ঘরেই রাখতে হয়েছে। এছাড়া আর কোথাও টাকা রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার ভাতিজারা বৈধভাবে ব্যবসা করে আয়-রোজগার করেছে। সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সরকারকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ট্যাক্স দিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, তারা দুই ভাই ব্যবসা করেছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করেনি; মানিলন্ডারিং, চোরাচালান করেনি; ব্যাংক জালিয়াতিও করেনি। যা করেছে তা হলো সৎ ব্যবসা। এ জন্য তারা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য কিন্তু আজকে তারা কারাগারে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার কারণে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করতে হয়। আর এলসি করার জন্য প্রয়োজন সচল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
এমআই/এসকেডি/জেএস