প্রথমে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকদের টার্গেট করে টাকার বিনিময়ে সরকারি বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। রাজি হলে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে অভিভাবকদের বিভিন্ন সরকারি পদে চাকরির প্রস্তাব দেয়। চাকরিপ্রত্যাশীর আর্থিক সক্ষমতা ও পদ অনুযায়ী টাকার অংক নির্ধারণ হয়। এভাবে চাকরি দেওয়ার নামে প্রার্থীপ্রতি আদায় করে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।

প্রথমে অর্ধেক টাকা নেয়, বাকি টাকা নিয়োগপত্র পাওয়ার পর দিতে হবে মর্মে চুক্তি হয়। এরপর প্রার্থীর ঠিকানা বরাবর ডাকযোগে পাঠানো হয় ভুয়া নিয়োগপত্র। হাতিয়ে নেওয়া হয় বাকি টাকাও। এভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারিত চাকরিপ্রত্যাশী নিয়োগপত্র পরিচিতদের দেখালে বুঝতে পারেন প্রতারণার বিষয়টি। এরপর তিনি র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।

সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে যৌথ অভিযানে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটক করে র‍্যাব-৩ ও এনএসআই।  

আটকরা হলেন- মো. আব্দুল মান্নান (৫০) ও কাজী সোলাইমান হোসেন জনি (৩৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে র‍্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, একটি প্রতারক চক্র সরকারি বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে নিরীহ জনসাধারণের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‍্যাব-৩ ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি দল মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) রাতে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে।

বীণা রানী দাস জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকদের অভিভাবকদের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে থাকেন।

তিনি জানান, আটক আব্দুল মান্নান (৫০) চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকদের অভিভাবকদের টাকার বিনিময়ে সরকারি বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখান। প্রলোভনে রাজি হলে চাকরিপ্রত্যাশীর জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন মান্নান। তারপর চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তাব দেন। চাকরিপ্রার্থীর আর্থিক সক্ষমতা ও পদ অনুযায়ী টাকার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এভাবে একটি সরকারি পদে চাকরি দেওয়ার জন্য তারা প্রার্থীপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন।

তিনি আরও জানান, অভিভাবকদের সাথে প্রাথমিক বোঝাপড়ার পর চুক্তি অনুযায়ী মান্নান প্রথমে অর্ধেক টাকা নিয়ে নেন। বাকি টাকা নিয়োগপত্র পাওয়ার পর দিতে হবে মর্মে চুক্তি হয়। এরপর মান্নান প্রার্থীদের কাজী সোলাইমান হোসেন জনি নামে যিনি আটক হয়েছেন তার কাছে নিয়ে যেতেন। জনি নিজেকে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরপর প্রার্থীর কাছে ডাকযোগে ভুয়া নিয়োগপত্র পাঠানো হতো।

এর পরের ধাপে প্রার্থীকে নির্ধারিত তারিখে টাকাসহ চাকরিতে যোগদান করার জন্য বলা হতো। প্রার্থীর কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারকচক্র কৌশলে পালিয়ে যায় এবং প্রার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিত।

এভাবে চক্রটি সর্বশেষ এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি নিয়োগপত্র পরিচিতজনদের দেখিয়ে বুঝতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

বীণা রানী দাস বলেন, অভিযোগকারী ভুক্তভোগী ছাড়াও প্রতারকচক্রটি বিভিন্ন সরকারি পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১৫ জনের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এইচকে