২০০৯ সালে জমি বিক্রি ও ঋণ করে দুবাই যান রানা আহমেদ। কিন্তু কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে যাকাত ভিসায় দেশে ফেরেন তিনি। এরপর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না রানা। এজন্য প্রতিবেশীর তিন বছর বয়সী শিশুকে অপহরণ করেন তিনি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টানা ২৩ ঘণ্টা অভিযান শেষে শিশু অপহরণের ঘটনায় জড়িত রানা আহমেদ বাকিকে (২৬) গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। উদ্ধার করা হয় অপহৃত শিশু আফিয়াকে।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গত ২১ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন পল্লীবিদ্যুৎ, কবরস্থান রোড এলাকা থেকে সাড়ে ৩ বছরের শিশু আফিয়াকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার দিনই অপহরণকারী মোবাইল ফোনে শিশুটির বাবা-মার কাছে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল। আভিযানিক দল প্রথমে অপহরণকারীর নিজ জেলা পাবনা ও শ্বশুর বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় অভিযান পরিচালনা করে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অপহরণকারী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানায় দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৯টার থেকে আজ (রোববার) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানাধীন এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।

এক পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানাধীন ১০ নং কৈজুরি ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্লুইস গেট এলাকার একটি বাসা থেকে অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারী রানা আহমেদ বাকিকে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অপহরণকারী রানা আহমেদ দুই বছর ধরে আশুলিয়া থানাধীন পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। পেশায় রিকশাচালক রানা বেশিরভাগ সময় রাতে রিকশা চালাতেন। দিনে বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে স্থানীয় একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতেও কাজ করতেন।

বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। এ সময় তার বাড়ি মানিকগঞ্জ এবং নানা বাড়ি ধামরাই থানায় বলে জানান। তিনি নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক, বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স ১০ মাস। তার নিজ বাড়ি পাবনা জেলার সদর থানায় ভাউডাঙ্গা গ্রাম এবং শ্বশুর বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানায়।

ভিকটিম শিশুর বাবা আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও মা সোনিয়া বেগম (২৭) দুজনই গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য

দীর্ঘ দিনের পরিচিত আনোয়ারা নামে এক নারীর বাসায় শিশু আফিয়াকে রেখে যেতেন তারা। আনোয়ারার পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন রানা। সেই সুবাদে ভিকটিম শিশুর সঙ্গে মামা পরিচয়ে মিশতেন রানা।

কী কারণে শিশু আফিয়াকে অপহরণ করেছিল রানা? জানতে চাইলে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, অপহরণকারী রানা আহমেদ ২০০৯ সালে জমি-জমা বিক্রি ও ঋণ করে দুবাই গমন করেন। কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে যাকাত ভিসায় দেশে ফেরত আসেন। দেশে ফেরত আসার পর থেকে তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্যই তিনি শিশু আফিয়াকে অপহরণ করেন।

অপহরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে মোজাম্মেল হক বলেন, শিশুর বাবা-মা দুজনেই বাসায় না থাকায় গত ২১ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে শিশুটিকে অপহরণ করার উদ্দেশ্যে প্রথমে তাকে একটি চিপস কিনে দিয়ে পল্লীবিদ্যুৎ থেকে রিকশাযোগে বলিভদ্র বাজারে নিয়ে যান রানা। সেখান থেকে শিশুটিকে গেঞ্জি ও স্যান্ডেল কিনে দেয়। পরবর্তীতে বলিভদ্র থেকে বাসযোগে চন্দ্রা যায়। চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে বন্ধু রবিউলের বাড়িতে যায় সে। সেখানে অপহৃত শিশুটিকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয় এবং বন্ধুকে জানায় তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বিধায় কিছুদিন থেকে চলে যাবে। সেখান থেকেই রানা আহম্মেদ ও শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করা হয়।

জেইউ/এসকেডি