ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন সুমাইয়া (ছদ্মনাম)। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মুসা আসারীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় তার। মুসা নিজেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে রোল নম্বর নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করে জানান পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে সে চান্স পায়নি। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি সুমাইয়াকে ডেন্টালে ভর্তি করে দেবেন।

বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মুসা ইমো আইডিতে সুমাইয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তার পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেন। বিশ্বাস করে মুসার হাতে দুই লাখ টাকা দেন সুমাইয়া। এরপর থেকে মুসা তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি ও হুমকি দেন মুসা।

ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে প্রতারণার অভিযোগে মুসা আসারী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। রোববার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের ভুয়া ২টি পরিচয়পত্র, একাধিক ভুয়া এনআইডি কার্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্র/ছাত্রীদের প্রবেশপত্রের কপি জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, গ্রেফতার মুসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। গত দুই বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তিনি।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ভিকটিম গত ১০ অক্টোবর ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ফলাফল খারাপ হয়। পরবর্তীতে গত ১২ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর গ্রেফতার মুসা আসারীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয়।

মুসা আসারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে, ভিকটিমের রোল নম্বর নেন। তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করে জানান যে তার রেজাল্ট ভালোই হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছেন কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে তার নাম আসেনি। তবে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে ডেন্টালে ভর্তি করিয়ে দিতে পারবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমের কাছে এত টাকা না থাকায় মুসা বলেন এখন দুই লাখ টাকা দিলেই হবে। বাকি টাকা ডেন্টালে ভর্তির পরে দিলে হবে।

তিনি বলেন, অভিযুক্তের কথা বিশ্বাস না করায় তখন ভিকটিমের ইমো আইডিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তার পরিচয়পত্র ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠান। এসব দেখে ভিকটিম বিশ্বাস করেন সে মুসা সত্য কথাই বলছেন। এ জন্য যাত্রাবাড়ী থানার শহীদ ফারুক সড়কের রেটিনা কোচিং সেন্টারের সামনে চাহিদা মোতাবেক মুসাকে দুই লাখ টাকা প্রদান করেন।

তিনি আরও বলেন, টাকা দেওয়ার পর দিন মুসাকে ফোন দিয়ে রেজাল্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, আজকের মধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। তা নাহলে রেজাল্ট পরিবর্তন হবে না। তখন বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয় সুমাইয়া ও তার অভিভাবকের। তখন তারা মুসার কাছে টাকা ফেরত চান। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখায় মুসা। এ ঘটনায় গত শনিবার (২৩ অক্টোবর ২০২১) যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়।

পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগে হস্তান্তর হলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে   রোববার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মুসা সুমাইয়ার মতো অসংখ্য প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এসকেডি