আগামী ২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সপ্তম ধাপে ১০টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভাগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ইভিএমে পৌরসভার ভোটগ্রহণ করতে বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে ইসির যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, সপ্তম ধাপের নির্বাচনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) কর্মকর্তারা সরেজমিন উপস্থিত থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সব প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম কাস্টমাইজেশনসহ নির্বাচন উপযোগী করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। প্রথম ধাপের তফসিলে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোট হয়েছে। আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং পঞ্চম ধাপে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয় এবং ষষ্ঠ ধাপে গত ২০ সেপ্টেম্বর ৯টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়। সপ্তম ধাপে আগামী ২ নভেম্বর ১০টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।  

আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়।

সপ্তম ধাপে যেসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে- নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, খাগড়াছড়ির রামগড়, বগুড়ার সোনাতলী, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, নীলফামারীর ডোমার, নড়াইলের লোহাগড়া, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এসব পৌরসভায় সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ইভিএম ব্যবহারে ইসির বিশেষ পরিপত্রে বলা হয়েছে

ইভিএম ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার: ইভিএম ব্যবহার যেহেতু একটি কারিগরি বিষয় এবং নতুন ধরনের ব্যবহার কার্যকারিতা রয়েছে। এজন্য সব প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট এবং ভোটারদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের সুবিধার্থে ইভিএম ব্যবহার পদ্ধতি বিষয়ক একটি নির্দেশিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ: নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য দুই দিনব্যাপী এবং পোলিং অফিসারদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে একদিন দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মক ভোটিং: নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে সব সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার উপস্থিত থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। মক ভোটিং শেষে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার গণভোটে এ ব্যবহৃত ইভিএমগুলো সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে বুঝিয়ে দেবেন। অফিসাররা ভোটগ্রহণের দিন ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

নিরাপত্তা সহকারে ইভিএম এর পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা যাচাই করা: ইভিএমগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিধায় মেশিনগুলো সারিবদ্ধভাবে রেখে যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে পরিবহন করতে হবে। ভোটগ্রহণের আগের দিন অন্যান্য নির্বাচনী মালামালসহ বিভিন্ন প্রিজাইডিং অফিসারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ অবশ্যই সঠিকতা যাচাই করবেন। কোনোরকম ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। রিটার্নিং অফিসার কন্ট্রোলরুমকে অভিহিত করে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন অথবা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কারিগরি দলের গঠন: প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন করে কারিগরি সদস্য সহযোগিতা করবেন। এজন্য রিটার্নিং অফিসার তাদেরকে প্রয়োজনে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবেন। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র ভোটকক্ষ প্রস্তুত করবেন।

মোবাইল কারিগরি টিম: নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল কারিগরি টিম সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সমস্যা আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া নিশ্চিত করবেন।

ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ডের এবং প্রদত্ত পিন পাসওয়ার্ড গোপনীয়তা রক্ষা: ইভিএমের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ড এবং 
মেশিন চালু করার পিন পাসওয়ার্ড প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করা হবে। সরকার যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে এবং এসবের কার্ড এবং পাসওয়ার্ড যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।

অতিরিক্ত অডিট ও পোলিং কার্ডের ব্যবহার: সুষ্ঠুভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে ব্যবহৃত অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ডের একটি সামগ্রিক বেকআপ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত রাখবেন।

ডেমো ভোটগ্রহণ: ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য সর্বদা গৃহীত ইভিএমগুলো ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টকে ভোটগ্রহণ প্রদর্শন করতে হবে। ডেমো ভোটগ্রহণের সময় ইভিএমগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সঠিক আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

এসআর/জেডএস