ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে নগদ টাকা তুলতে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে ডাকাত দলটি। টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে দলের সদস্যরা।

নিজেদের কাছে থাকা ডিবির জ্যাকেট পরে ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা নিয়ে বের হওয়া ব্যক্তির গতিরোধ করে তারা। এ সময় নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে যে কোনো অপরাধের অজুহাতে ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে চোখ ও মুখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে টাকা লুট করত চক্রটি। 

গত মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) একই কাদায় চক্রের সদস্যরা রাজধানীর দুই জায়গায় ডাকাতি করবে বলে গোপন সংবাদ পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। এ সংবাদের ভিত্তিতে এ চক্রের ৯ সদস্যকে ডিবি গুলশানের একাধিক টিম রাজধানীর মতিঝিল ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি ওয়াকিটকি, ১টি ডামি পিস্তল, ১ জোড়া হাতকড়া, ১টি নেভি ব্লু রংয়ের ট্রাভেল ব্যাগ, ডিবি পুলিশের ২টি জ্যাকেট, ৪টি নতুন গামছা, ১টি সিলভার রংয়ের প্রাইভেটকার, ১টি মাইক্রোবাস ও ৫ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার হওয়া ডাকাতরা হলেন : মো আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো ইমদাদুল শরীফ, মো খোকন মিয়া, মো মাসুদুর রহমান তুহিন, মামুন সিকদার, মো কামাল হোসেন, মো ওয়াহিদুল ইসলাম, মো ফারুক বেপারী ও মো. মতিউর রহমান।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির ডিবি উত্তরের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই সুযোগে কয়েকটি ডাকাত দল রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে আসছে বলে আমাদের কাছে গোপন খবর আসে।  চক্রটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসযোগে ভুয়া র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়া অথবা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তুলে নেওয়া ব্যক্তিকে কখনো সাভার-আশুলিয়া, কখনো বেড়িবাঁধ, কখনো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও ভিকটিমদের ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নেয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই চক্রের ৯ সদস্যকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যেভাবে ডাকাতি করে চক্রটি

ডিবির এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, চক্রটির সদস্যরা প্রথমে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছার পর তাদের সঙ্গে থাকা ডিবির জ্যাকেট পরে ওই ব্যক্তির গতিরোধ করে।

এ সময় ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয়ে কোনো একটা অপরাধ করার অজুহাত দেখিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর গাড়ি নির্জন স্থানে নিয়ে ভয় দেখিয়ে ওই ব্যক্তির কাছে থাকা টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নেয় তারা। 

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সঙ্গে যেতে বললে যাচাই করবেন। যাচাই না করে তাদের সঙ্গে যাবেন না। এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে নিকটস্থ থানায় অথবা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর  ৯৯৯ কল করে জানাবেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ডাকাতি ও মাদকের দুটি মামলা রুজু হয়েছে।  

এমএসি/এসকেডি