বাসাবাড়ি থেকে নেওয়া প্রতিদিনের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এক বছরেও প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
 
কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রয়েছে বর্জ্যের ঘাটতিও। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য দরকার তা সরবরাহ হচ্ছে না।
 
জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিএনসিসি। প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্ত অনুযায়ী, ডিএনসিসি স্পন্সর কোম্পানিকে ৩০ একর জমি এবং দিনে তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করবে। কিন্তু বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি উত্তর সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে, ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপন্ন হয় দুই হাজার ৭০০ টন। অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে ৩০০ টন।

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রয়েছে বর্জ্যের ঘাটতিও। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য দরকার তা সরবরাহ হচ্ছে না 

প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কোনো প্রকল্প গ্রহণ বা একনেকের অনুমোদন নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছরের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছি। এগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে। 


 
‘আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ অর্থাৎ ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাসসহ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন উৎপাদিত প্রায় তিন হাজার টন সলিড বর্জ্য আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।’
 
তিনি বলেন, প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ‘আধুনিক যান-যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সড়ক পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক কাজের উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।
 
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে যেসব বাধা
 
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় এক বছর আগে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই এ প্রকল্পের। প্রকল্পের প্রথম বাধা জমি অধিগ্রহণ। বাসাবাড়ি থেকে উৎপাদিত প্রতিদিনের বর্জ্য রাজধানীর আমিনবাজারের ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয়। এ ল্যান্ডফিলের আয়তন প্রায় ৫০ একর। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি অনুযায়ী ৫০ একর জমির পাশে আরও ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করবে ডিএনসিসি।

নতুন ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে ৬০০ কোটির মতো টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ খাতে ডিএনসিসির কাছে আছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা ছাড়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে ৬০০ কোটির মতো টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ খাতে ডিএনসিসির কাছে আছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা ছাড়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের অন্যান্য কাজ শেষপর্যায়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ অবস্থায় জমি অধিগ্রহণ হলেই কেবল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থছাড়ের পর আগামী ফেব্রুয়ারির দিকে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এরপর শুরু হবে মাঠপর্যায়ের কাজ। অর্থছাড়ের আগ পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকছেই।

ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ টন। অথচ চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহের কথা ডিএনসিসির। এ পরিমাণ বর্জ্য দিতে না পারলে প্রতি টনের জন্য ডিএনসিসিকে জরিমানা দিতে হবে তিন হাজার টাকা করে 

প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেক বাধা বর্জ্যের ঘাটতি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ টন। অথচ বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহের কথা ডিএনসিসির। এ পরিমাণ বর্জ্য দিতে না পারলে প্রতি টনের জন্য ডিএনসিসিকে জরিমানা দিতে হবে তিন হাজার টাকা করে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বর্জ্য সরবরাহ করা।


 
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অগ্রগতি, বর্তমান বাধা ও জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মহসীন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমও ‘ব্যস্ত আছি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
 
তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের এখনও জমি অধিগ্রহণ হয়নি। জমি অধিগ্রহণের অর্থও পাওয়া যায়নি। এজন্য ৬৩০ কোটি টাকা দরকার। হাতে আছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ডিএনসিসিকে ৩০ একর জমি এবং দিনে তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করতে না পারলে ডিএনসিসিকে প্রতি টন ঘাটতি বর্জ্যের জন্য তিন হাজার টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রকল্পটি অত্যন্ত জটিল। তবে আমরা অগ্রগতির জন্য কাজ করছি।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অগ্রগতি, বর্তমান বাধা ও জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএনসিসির সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মহসীন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রশ্ন করা হলে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমও ‘ব্যস্ত আছি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান 

এদিকে, গত ১৬ অক্টোবর ‘পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সেক্টরে ৫০ বছরের অর্জন ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর অধিকাংশ বাসাবাড়ি এমনকি অভিজাত এলাকার ভবনগুলোতেও কার্যকর সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল না থাকায় অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য সরাসরি ড্রেন কিংবা খালে পতিত হচ্ছে। ফলে জলাশয়ের পানিসহ সার্বিক পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নগরীতে অঞ্চলভিত্তিক ফিক্যাল স্লাজ প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পরিশোধন ব্যবস্থা আরও জোরদার করছি আমরা। 
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে— মন্তব্য করেন ঢাকা উত্তরের মেয়র।
 
এএসএস/এসএসএইচ/এমএআর/