নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির (২২) ফেসবুক ও ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে ২০১৭ সালের দিকে জঙ্গিবাদে জড়ান। জঙ্গিবাদের অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

কারাগারে এক বছর তিন মাস থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে। এরপর তার যোগাযোগ হয় নব্য জেএমবির সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাতে পুরানা পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা রেখে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান বাছির।

বুধবার (৩ নভেম্বর) মিরপুর বাজার রোড এলাকা থেকে সিটিটিসির ডিসপোজাল টিম ও সিটি ইনভেস্টিগেট টিম বাছিরকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বিস্ফোরণের ঘটে। ওই সময় ঢাকা শহরের এমন আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিরই রহস্য উদঘাটন হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষে পুলিশ চেকপোস্টে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির।

তিনি বলেন, বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি তার বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায়। তিনি ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে একবার সিটিটিসি গ্রেফতার করে। এক বছর তিন মাস জেলে থেকে জামিন পেয়ে আবার নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়ান তিনি। জেল থেকে বের হয়ে নব্য জেএমবির সামরিক শাখায় কাজ করতে শুরু করে। আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে তার নির্দেশে কাজ করতে শুরু করে। নব্য জেএমবির একজন সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানেও কাজ করে বাছির। আবু মোহাম্মদ তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশনা দেয়। পরে তাকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম কেনার জন্য টাকা পয়সা দেয়।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বাছির প্রথমে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। পরে মাহাদী ও আবু মোহাম্মদ তাকে সেই বাসাটি ছেড়ে একা বাসা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মান্ডা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসা থেকেই হামলার জন্য বোমা তৈরি করেন বাছির। পরে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পুরানা পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বোমাটি রেখেছিলেন। তিনি বোমা রাখার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজছিলেন যেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ফলে সবগুলো ঘটনার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গেলেও পল্টনের ঘটনার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তাকে যারা নির্দেশ দিয়েছিল ঘটনাটি ঘটানোর জন্য তাদের নাম পেয়েছি। আরও কোনো জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা এ ঘটনায় জড়িত কি-না এ বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজকে আদালতে আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করব।

জামিনে বের হওয়া কতজন জঙ্গি সিটিটিসি নজরদারিতে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা হয়তো সবাইকে মনিটরিং করতে পারিনি বা পারি না, কিন্তু জামিনে বের হওয়া অধিকাংশ জঙ্গিদের আমরা নানা কৌশলে মনিটরিং করি। বাছিরও আমাদের মনিটরিংয়ের ছিলেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ মান্ডা চলে যাওয়ায় আমাদের নজরদারিতে ছিলেন না। তোপখানা রোডে যখন তিনি থাকতেন তখন মনিটরিংয়ের ছিলেন। তিনি একটি স্থানীয় ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন, সে পর্যন্ত আমাদের নজরদারিতে ছিলেন।

জামিনে বের হওয়া কতজন জঙ্গি সিটিটিসি নজরদারিতে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে ধরলে অনেক জামিন পাওয়া জঙ্গি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। জামিন পাওয়ার পর আমরা প্রথম যে বিষয়টি দেখি, কোন জঙ্গি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন বা আবার পুনরায় সংগঠনের কাজ কর্মে যুক্ত হয়েছেন। আমরা যাকে মনে করি নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন তাকে আমরা নজরদারিতে রাখি।

কারাগারে যেসব জঙ্গিরা রয়েছে তাদের নজরদারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারাগারে আমরা নজরদারি করতে পারি না, কারণ আমাদের সেই অনুমতি নেই। তবে আমরা কারাগারে নজরদারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। কীভাবে কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডি-রেডিকালিজেশন করা যায় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। আশা করছি এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া পাব।

এমএসি/ওএফ